সরকারি বরিশাল কলেজের একমাত্র মাঠ নষ্ট করে ভবন নির্মাণ বন্ধ করা না হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ওই মাঠ রক্ষায় গঠিত নাগরিক কমিটির নেতারা আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এই হুঁশিয়ারি দেন।
আজ দুপুরে কলেজ মাঠে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ১৫ জুলাই নগরে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মাঠ রক্ষা কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাঠ রক্ষা কমিটির সভাপতি ও সচেতন নাগরিক কমিটির বরিশাল জেলা শাখার সাবেক সভাপতি শাহ সাজেদা। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিকল্প স্থান থাকা সত্ত্বেও সরকারি বরিশাল কলেজের একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট করে ভবন নির্মাণের উদ্যাগ নেওয়া হয়েছে। বরিশাল সরকারি কলেজ মহাত্মা অশ্বিনীকুমারের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ। এই কলেজের একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট করে একটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করার পরিবেশবিধ্বংসী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কলেজ প্রশাসন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের যদি ভবন প্রয়োজন হয়, তাহলে দ্বিতল ভবনগুলোকে বহুতল ভবন করে শ্রেণিকক্ষের সংকট নিরসন করতে পারত অথবা কলেজের বিকল্প যে জমি রয়েছে, সেখানে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া যেত। কিন্তু তারা তা না করে কলেজের একমাত্র খেলার মাঠটি ধ্বংস করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে, এটা খুবই দুঃখজনক। অবিলম্বে এই কাজ বন্ধ না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন বক্তারা। এই দাবিতে ১৫ জুলাই বেলা ১১টায় কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং জেলা প্রশাসক ও মেয়রের কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন মাঠ রক্ষা কমিটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাসদ বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি আবদুল হাই মাহবুব, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম, সদস্য বিপ্লব দাস, বাম গণতান্ত্রিক জোট বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ আজিজ, বরিশাল সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান আবদুর রশীদ, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভংকর চক্রবর্তী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক টুনু রানী কর্মকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সরকারি বরিশাল কলেজ শাখার সংগঠক শিবানী শিকদার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, অশ্বিনীকুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী কলেজে এর আগেও পুকুর ভরাট করার অপচেষ্টা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর বেড়ে ওঠার জন্য শুধু মুরগির খোপের মতো কিছু ভবনই প্রয়োজন হয় তা না, খেলার মাঠ-গাছগাছালি-পুকুরও প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। খেলাধুলা-সাংস্কৃতিক আয়োজন থেকে বঞ্চিত হলে তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তি ও কিশোর গ্যাং তৈরির প্রবণতা আরও বাড়বে।
অবিলম্বে বরিশাল কলেজের খেলার মাঠ ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক শাহ সাজেদ বলেন, ‘খেলার মাঠ নষ্ট করে এই ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমরা এর আগেও এই কলেজের অনেক ঐতিহ্য নষ্ট করে কথিত উন্নয়ন করার পাঁয়তারা দেখেছি, সেগুলো নাগরিক সমাজের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিহত করা হয়েছে। এবারও তেমনটাই করা হবে।’
তবে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলী হোসেন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এই ভবন নির্মাণের বরাদ্দ আনতে হয়েছে। আমি সরকারের প্রতিনিধি। আমার কী করার আছে? সৌন্দর্য কেউ নষ্ট করতে চায় না। এত বড় ভবন করার মতো কলেজের জায়গা নেই। কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। তাই এই স্থানে ভবন নির্মাণ না করার বিকল্প নেই।’
১৯৬২ সালে নগরের কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির সহযোগিতায় এ অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী, দানবীর ও ভারতবর্ষের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম সংগঠক অশ্বিনীকুমার দত্তের বাসভবনে নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে নাইট কলেজের নাম পরিবর্তন করে বরিশাল কলেজ রাখা হয়। ১৯৮৬ সালে কলেজটি সরকারিকরণ হয়। এরপর কলেজ উন্নয়নের নামে ১৯৯১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ অশ্বিনীকুমার দত্তের মূল বাসভবনটি ভেঙে ফেলে। কলেজের একটি পুকুর কয়েকবার ভরাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসীর প্রতিবাদে পুকুরটি আর ভরাট করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।