চাষিদের দাবি ও আন্দোলনের পরই রাজনগরে মনু সেচ প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্পহাউস সার্বক্ষণিক চালু এবং বিকল্প গেট খুলে দেওয়া হয়।
জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওর অঞ্চলে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এতে চাষিরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। চাষিরা পানি কমিয়ে হাওর অঞ্চলকে আমন চাষের উপযোগী করার দাবিতে বিভিন্ন ব্যানারে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন এবং সমাবেশ করেন।
চাষিদের দাবি ও আন্দোলনের পরই রাজনগরে মনু সেচ প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্পহাউস সার্বক্ষণিক চালু এবং বিকল্প গেট খুলে দেওয়া হয়। এতে ২২ দিনে হাওরে প্রায় সাড়ে চার ফুট পানি কমেছে। পানি কমানোর এই উদ্যোগে এ পর্যন্ত আট শতাধিক হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে এক হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের আশা করা হচ্ছে। এদিকে পানি পর্যবেক্ষণ মনিটরিং কমিটির পক্ষ থেকে পানি বেশি কমে যাওয়ায় পাম্প ও গেট বন্ধ রাখতে পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে (যান্ত্রিক) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চাষি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউয়াদীঘি হাওর অঞ্চলে জলাবদ্ধতায় কৃষকেরা সময়মতো হালিচারা প্রস্তুত করেও রোপণ করতে পারছিলেন না। চারা রোপণের সময়ও পেরিয়ে যেতে থাকে। অনেকের হালিচারা নষ্ট হয়। এতে আমনচাষিরা হতাশ হয়ে পড়েন। নিরুপায় হয়ে চাষিরা স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও কৃষক সমাবেশ করে ক্ষোভ জানান। গত ১১ আগস্ট রাজনগরের বিভিন্ন গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক কৃষি ও কৃষক রক্ষা কমিটির ব্যানারে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এসে কৃষক সমাবেশ এবং জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর আগে ৬ আগস্ট শহরের চৌমোহনা চত্বরে হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি একই দাবিতে মানববন্ধন এবং ২১ জুলাই কাশিমপুর পাম্পহাউস ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়। এ সময় পাউবো (যান্ত্রিক) বিদ্যুৎ-সংকটে পাম্পহাউসের সব কটি পাম্প নিরবচ্ছিন্ন চালাতে না পারার কথা বলে।
এদিকে কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান গত ১১ আগস্ট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), পাউবো, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনু সেচ প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্পহাউসে চাহিদা অনুযায়ী সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। ১২ আগস্ট পাম্পহাউসের আটটি পাম্প চালুর পাশাপাশি হাওর থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প গেট খুলে দেওয়া হয়। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকেরা আমনের চারা রোপণ করেন। এদিকে পানি বেশি কমে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার পানি পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত মনিটরিং কমিটির পক্ষ থেকে পাম্প ও গেট বন্ধ রাখার জন্য পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে (যান্ত্রিক) চিঠি দেওয়া হয়। চার সদস্যবিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজনগরের ফতেহপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হেলাল আহমদ এই চিঠি দেন।
পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) এম এ হান্নান খান বলেন, ‘প্রায় ২২ দিনে সাড়ে চার ফুট পানি কমেছে। এখন আমন চাষের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মনিটরিং টিম পাম্প ও গেট বন্ধ করতে বলেছে। কারণ, পানি আরও কমলে কচুরিপানা বের করতে ও বোরো চাষে সমস্যা হতে পারে।’
সদর উপজেলার আখাইলকুরা ইউনিয়নের পাড়াশিমইল গ্রামের জামাল আহমদ বলেন, ‘পানি কমায় প্রায় ২০ কিয়ার (বিঘা) জমিতে চারা রোপণ করতে পারছি। আরও রোপণের ইচ্ছা আছে।’
সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের বড়কাপন গ্রামের শেখ লিংকন আহমদ বলেন, ‘আন্দোলন করা বাদে (শেষে) পানি কমছে। পাঁচ কিয়ার খেত করছি। পানি আরও আগে কমলে ১০–১৫ কিয়ার করতাম পারতাম।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পানি দেরিতে কমায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। পানি কমার পর এ পর্যন্ত হাওর অঞ্চলে আট শতাধিক হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আরও এক হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রোপণ চলছে। আরও সপ্তাহখানেক রোপণ করা যাবে। পানি বাড়লে প্রয়োজনে আবার সেচ দেওয়া যাবে।’