জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে দুজন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উভয়েই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
এর মধ্যে একজন গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্য, অন্যজন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। উভয়েই নিজেদের আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীও। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা ‘জেতার স্বপ্ন’ও দেখছেন।
দুই নারী প্রার্থীর একজন হচ্ছেন সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা) আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা (কাঁচি)। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর স্ত্রী। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও তিনি। সুরঞ্জিতের মৃত্যুর পর তিনি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। পরে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়া সেনগুপ্তা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে এবার এখানে মনোনয়ন পান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল আমিন চৌধুরী (নৌকা)। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন তিনি। এর পর থেকেই এলাকায় তাঁকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর স্ত্রী হওয়ার কারণে জয়া সেনগুপ্তা ভোটের মাঠে আলোচিত নাম হয়ে উঠেছেন। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকেই তাঁর সঙ্গে প্রচার-প্রচারণায় ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আল আমিন চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। শেষ পর্যন্ত কে জয়ের মালা পরবেন, তা নিয়েই এখন নির্বাচনী এলাকাজুড়ে জোর আলোচনা চলছে।
যোগাযোগ করলে জয়া সেনগুপ্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটারদের বিপুল উৎসাহ কাজ করছে। নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। ভোটাররা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর অনুসারীকেই ভোট দিতে চাইছেন। এখনো তাঁরা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ তো ডরভয় দেখাচ্ছে। সে জন্য একটু চিন্তার মধ্যে আছি।’
এদিকে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী (ঈগল)। এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় প্রার্থী নেই। তাই এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মুনিম চৌধুরীর (লাঙ্গল) সঙ্গে কেয়া চৌধুরীর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা।
কেয়া চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর বাবা হবিগঞ্জের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মানিক চৌধুরী ২০১৫ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। বাবার ইতিবাচক ভাবমূর্তির পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটা অংশ কেয়া চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করায় ভোটের মাঠে তিনি অনেকটা সুসংহত অবস্থানে আছেন।
কেয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ীই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। স্বতন্ত্র হলেও দলের সবাই আমার পক্ষেই আছেন। এ ছাড়া দলনিরপেক্ষ ভোটাররাও আমাকেই সমর্থন দিয়েছেন। আমি আশা করব, ভোটকেন্দ্রে মানুষজন আসবেন এবং তাঁরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দেবেন। মোটকথা, আমি আমার সম্মানিত ভোটারদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে চাই।’