৯ বছর আগে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেনকে গুমের ঘটনায় মামলা হয়েছে। সাজ্জাদ হোসেনের ছোট ভাই আরিফুল হোসেন আজ সোমবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন।
কুষ্টিয়া আদালতের আইনজীবী খন্দকার সিরাজুল ইসলাম তাঁর পক্ষে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও অনেকের কথা বলা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ (এমপি) সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
খন্দকার সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি করেন এবং মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করতে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের ছোট ভাই আতিকুর রহমান, শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমানের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হালিমুজ্জামান, কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের, কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলা এলাকার রমজান হোসেন এবং কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার চক হরিপুর গ্রামের শেখ আফাজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল হোসেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় শোক দিবসের র্যালি বের করা হয়। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মজমপুর গেটে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানাতে যান কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন। ওই সময় কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র মহড়ার কারণে সেখানে আরেকটি পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় মোমিনুরের নেতা-কর্মীদের ছুরিকাঘাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সবুজ নামের এক যুবক নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের পর উপস্থিত সব নেতা-কর্মী গা ঢাকা দেন।
পরে আসামিরা সাজ্জাদকে মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলেন। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গেলে সাজ্জাদকে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘তোমার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। দ্রুত গাজীপুরের ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টে চলে যাও। আমি রিসোর্টের মালিককে বলে দিচ্ছি, সেখানে তুমি নিরাপদে থাকতে পারবে।’ হানিফের কথামতো সাজ্জাদ ওই রিসোর্টে ওঠেন। সেখানে অবস্থানকালে অন্য আসামিদের যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাজ্জাদকে ১০-১২ জন সাদাপোশাকধারী ব্যক্তি রিসোর্ট থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। মাহবুব উল আলম হানিফসহ আসামিরা প্রশাসনের ওপর দায় চাপিয়ে সাজ্জাদকে গুম করেন।
মামলার বিষয়ে শেখ সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তাঁর স্বামী কম সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। কুষ্টিয়া পৌর মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে পৌরবাসীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু মাহবুব উল আলম হানিফসহ আসামিরা কেউই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। আর সেই কারণে তাঁর স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে গুম করে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘স্বামী ছাড়া সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। মাহবুব উল আলম হানিফসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে অবশ্যই আমার স্বামীর হদিস পাওয়া যাবে।’