মাগুরায় যানবাহন ভাড়া পাচ্ছেন না বিএনপি নেতারা, বায়নার টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে

ভাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে কার ও মাইক্রোবাস। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা সদর হাসপাতালের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশে যাওয়ার জন্য যানবাহন ভাড়া পাচ্ছেন না মাগুরা বিএনপির নেতারা। মালিকদের পক্ষ থেকে বিএনপির নেতাদের খুলনা যাওয়ার উদ্দেশে বাস ও মাইক্রোবাস ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করা হচ্ছে। এমনকি ফেরত দেওয়া হচ্ছে বায়না নেওয়া টাকাও। ফলে বিকল্প উপায়ে যেকোনোভাবে খুলনায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

নেতা-কর্মীদের ২২ অক্টোবরের খুলনার গণসমাবেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য আটটি বাস ও পাঁচটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন জেলার শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বদরুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা বিএনপির ৫০০ থেকে ৬০০ নেতা-কর্মীর খুলনা যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে মাগুরা ও ঝিনাইদহ এলাকার আটটি বাস ও পাঁচটি মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছিল। প্রতিটি বাসের ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। অগ্রিম হিসেবে ১৪ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বাসের অগ্রিম টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন মালিকেরা।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বদরুল আলম বলেন, ‘বাসমালিকেরা আমাদের জানিয়েছেন, সরকার থেকে তাঁদের ওপর চাপ আছে। অনেক নেতা–কর্মী খুলনা যাওয়ার ব্যাপারে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন। কিন্তু গাড়ি না পেলে কীভাবে সবাইকে নিয়ে যাব, তা নিয়েই চিন্তা করছি।’

বদরুল আলম যাঁর মাধ্যমে বাস ভাড়া করেছিলেন, তাঁদের একজন উপজেলার লাঙ্গলবাঁধ এলাকার পরিবহনশ্রমিক রতন কুণ্ডু। জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হামলা–মামলার ভয়ে বাসমালিকেরা এখন খুলনার যাওয়ার জন্য ভাড়া দিতে চাচ্ছেন না। একটা মামলা দিয়ে দিলে মালিকদের লোকসান গুনতে হবে। এ কারণে বায়না টাকা ফেরত দিয়েছেন।

মাগুরায় বাসমালিকদের একজন নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস অনেকেই চেয়েছে। তবে ভাড়া দেওয়া নিষেধ। ওপর মহল থেকে নির্দেশ আছে বাস ভাড়া দেওয়া যাবে না।’ তিনি ‘ওপর মহল’ বলতে আওয়ামী লীগ নেতাদের ইঙ্গিত করলেও কোন পর্যায় থেকে নিষেধ করা হয়েছে, তা বলেননি।

বাসের মালিক কাকে ভাড়া দেবেন কাকে দেবেন না—এটা তাঁদের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা কারণে মালিকেরা বাস ভাড়া না দিতে পারেন। অনেক সময় ভাড়া নিয়ে বনিবনা হয় না। আমরা কাউকে নিষেধ করিনি। কাউকে বাধাও দিচ্ছি না। একটা রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচি পালন করবে, সেটা যদি শান্তিপূর্ণভাবে করে, তবে আমরা বাধা দেব কেন?’

শ্রীপুরের মতো বাস–মাইক্রোবাস ভাড়া পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন মাগুরা জেলা বিএনপি ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতা–কর্মীরাও। জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার খুলনার বিভাগীয় সমাবেশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন নেতা-কর্মীরা। যেখানে যাওয়ার জন্য প্রতিটি ইউনিটকে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে পৌর, সদর, শালিখা, দক্ষিণ মাগুরা ও মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপির পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা বাস ও মাইক্রোবাস ভাড়া পেতে চেষ্টা করছেন। তবে বাস ও মাইক্রোবাসমালিকেরা সমাবেশে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

খুলনায় যাওয়ার উপায় খুঁজতে বৈঠকে বসেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা শহরের ইসলামপুর পাড়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে

বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের ইসলামপুর পাড়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা সেখানে খুলনা যাওয়ার অনানুষ্ঠানিক প্রস্তুতি সভা করছেন। উপস্থিত নেতাদের আলোচনার মূল ইস্যু, খুলনায় পৌঁছাবেন কী করে? সেখানে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস ও মাইক্রোবাস ভাড়া পাওয়ার আশা তাঁরা ছেড়েই দিয়েছেন। বিকল্প উপায়ে যেকোনোভাবে তাঁরা খুলনায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছেন।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে (বৃহস্পতিবার) রাতেই নেতা–কর্মীদের একটি অংশ খুলনায় চলে যাবে। এ ছাড়া আগামীকাল মোটরসাইকেল, নৌপথ এমনকি ঝিনাইদহ থেকে ট্রেনে করেও যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে সবার একই কথা, যেকোনো মূল্যেই হোক খুলনায় পৌঁছাতে হবে।’

জানতে চাইলে মাগুরা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসহাক মল্লিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকেই ভাড়া নিতে চাইছিল। আমরা ভাড়া ধরিনি। এর আগে এসব সমাবেশে গেলে দেখেছি পুলিশ গাড়ি ঘুরায় দেয়। অনেক সময় মামলা দেয়। বাধা দেয়। এ কারণে আতঙ্কে মালিকেরা ভাড়া দেয়নি।’

একই প্রশ্নে মাগুরা জেলা কার ও মাইক্রোবাস মালিক কল্যাণ সমিতির সদস্যসচিব মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, খুলনায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গাড়ি ভাড়া না দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, গাড়ির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে সেটার দায় কে নেবে?’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো কৌশলেই হোক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপিকে খুলনার সমাবেশে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চান। যে কারণে বাস–মাইক্রোবাস মালিকদের চাপ দিয়ে ভাড়া দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এভাবে বিএনপিকে আটকে রাখা যাবে না। নানা পথে নেতা–কর্মীরা খুলনায় পৌঁছে যাবেন।