রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালের পাঁচ কিলোমিটার এক দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ শনিবার রংপুর সিটি করপোরেশন ও স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন বিডি ক্লিনের যৌথ উদ্যোগে এই কার্যক্রম শুরু হয়।
খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান আর এতে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা। প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন। আমন্ত্রিত ও বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আবদুল বাতেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী প্রমুখ।
সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এই খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দূষণমুক্ত রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আজ বিডি ক্লিনের মাধ্যমে শ্যামাসুন্দরী খালের ধাপ চেকপোস্ট এলাকা থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার একযোগে এক দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতার সুফল সম্পর্কে নগরবাসীকে বেশি করে সচেতন করতে সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পর শ্যামাসুন্দরী খালে নতুন করে যেন ময়লা ফেলা না হয়, এ জন্য নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রংপুরের ধাপ চেকপোস্ট এলাকায় খালের মুখে ময়লা–আবর্জনা অপসারণের কাজেও অংশ নেন প্রধান অতিথিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র মাহাবুবার রহমান, তৌহিদুল ইসলাম, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) মাহমুদ হাসান মৃধা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আজম আলী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান ইবনে তাজ, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বিডি ক্লিনের প্রতিনিধি ও সিটির বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা।
খালের ধাপ চেকপোস্ট এলাকা থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ১৫টি পয়েন্টে বিডি ক্লিনের এক হাজার সদস্য ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা খাল পরিষ্কার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন।
বিডি ক্লিনের প্রধান সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম বলেন, রংপুরের ঐতিহ্যবাহী খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার কার্যক্রমের সঙ্গে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। ভবিষ্যতে খালের বাকি অংশও পরিষ্কার করা হবে।
শহরের মুলাটোল এলাকায় খাল পরিষ্কার করছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ঠাকুরগাঁওয়ের নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, এই কাজ করে অনেক আনন্দ পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তিনি নগরবাসীকে খালের মধ্যে ময়লা না ফেলারও অনুরোধ জানান।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং স্থানভেদে ২৩ থেকে ৯০ ফুট প্রশস্ত খালটি সিটি এলাকার উত্তর–পশ্চিমে কেল্লাবন্দ এলাকার ঘাঘট নদ থেকে শুরু হয়ে নগরের মাঝ দিয়ে ধাপ, পাশারিপাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সীপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, শাপলা চত্বর, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জ সাতমাথা রেলগেট এলাকায় কেডি ক্যানেল স্পর্শ করে খোকসা ঘাঘট নদে মিশেছে।
সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, পয়োনিষ্কাশনের জন্য অবৈধ স্যুয়ারেজ সংযোগ যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রংপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে শ্যামাসুন্দরী খাল খনন, সংস্কারসহ আধুনিকায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট ডিজাইন–সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর চেষ্টা চলছে।