সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় রাতে চিংড়িঘের পাহারা দেওয়ার সময় স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার খোলপেটুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। চিংড়িঘেরের জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে দাবি নিহত ব্যক্তির স্ত্রীর।
নিহত ব্যক্তির নাম আবুল কাসেম কাগুজি (৪৫)। তিনি শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া গ্রামের নেছার আলী কাগুজির ছেলে।
নিহত আবুল কাসেমের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন জানান, গতকাল রাত ৯টার দিকে তিনি ও তাঁর স্বামী খোলপেটুয়া গ্রামে ঘের পাহারা দিতে আসেন। নৌকায় করে তাঁরা ঘের পাহারা দিচ্ছিলেন। রাত ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে তাঁরা ঘেরের এক পাশে পলিথিন মাথায় দিয়ে বসে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান গাজী ও রহিম গাজীর নেতৃত্বে সাত-আটজন তাঁর স্বামীর ওপর হামলা করেন। তাঁরা দা দিয়ে এলোপাতাড়ি তাঁর স্বামীর হাত, পা, ঘাড়, মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যান।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত লোকমান গাজী ও রহিম গাজী পলাতক। এ কারণে অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হাবিবুল্লাহ খাঁ বলেন, ১৯৪৯ সাল থেকে খোলপেটুয়া গ্রামের দুদু গাজীসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ২৫ বিঘা জমি কিনে তাঁরা ভোগদখল করে আসছেন। ২০১৫ সালে দুদু গাজীর ছেলে লোকমান গাজী ও রহিম গাজী এই জমি তাঁদের বলে দাবি করেন। এ নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁর (হাবিবুল্লাহ খাঁর) চাচাতো ভাই সফিকুল ইসলাম খাঁ হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে শ্যামনগর থানায় মামলা করেন। ওই মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে ভাগে ওই চিংড়িঘেরে মাছ চাষ করছিলেন খোলপেটুয়া গ্রামের আবুল কাসেম কাগুজি। গতকাল রাতে কাসেম ও তাঁর স্ত্রী ফিরোজা খাতুন ঘের পাহারা দিচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকজন এসে আবুল কাসেমের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে হত্যা করেন।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, ওই ঘেরের জমি নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে তাঁরা ২০১৬ সালে একবার সালিসও করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে কাগজপত্র দেখে মনে হয়েছিল ওই জমি হাবিবুল্লাহ মেম্বারদের। দ্বন্দ্ব মেটানোর স্বার্থে হাবিবুল্লাহরা দুই বিঘা জমি দিতে চেয়েছিলেন লোকমান গাজীদের। কিন্তু তাঁরা দুই বিঘা জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী জানান, লোকমান গাজী ও রহিম গাজীর বাবা দুদু গাজী ওই জমি বিক্রি করেননি। হাবিবুল্লাহ খাঁরা ওই জমি জাল দলিল করে ভোগদখল করছেন বলে তিনি শুনেছেন।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, রাত ১টার দিকে খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। ঘেরের জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আবুল কাসেমের হাত, পা, মাথা, ঘাড়, বুক, পেটসহ বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। লাশ আজ শুক্রবার ভোরে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। অভিযুক্ত লোকমান গাজী ও রহিম গাজীকে ধরতে তাঁদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি।