ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ছে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। রোববার বিকেলে
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ছে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। রোববার বিকেলে

উখিয়ায় ‘রহস্যময়’ আগুনে গৃহহীন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা, দেশলাইসহ কিশোর আটক

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১১) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ইতিমধ্যে ১২ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে।

এ আগুনে আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দুই হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদানের লার্নিং সেন্টার ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র রয়েছে। রোহিঙ্গা বসতিগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো এবং ঘনবসতি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

এ অগ্নিকাণ্ডকে রহস্যময় উল্লেখ করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কামিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ১৪-১৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা কিশোরকে দেশলাইসহ আটক করা হয়েছে। এই কিশোরকে ঘরে আগুন দিতে দেখেছেন অনেকে। তাকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে, এটি পরিকল্পিত বা নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ড কি না।

এদিকে ওই আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে একটু পরপর বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটছে। আতঙ্কে দিগ্‌বিদিক ছুটছেন রোহিঙ্গারা। উত্তর দিক থেকে আসা বাতাসে আগুনের শিখা দ্রুত অন্যান্য ক্যাম্পের বসতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।

সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ও কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবী আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প, এর ওপর পাহাড়ের ঢালু এলাকায় যাতায়াত সীমিত হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিও অনেক। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে আগুনে প্রাণহানি হয়েছে কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে হাসপাতালে পাঠানোর খবর পেয়েছি।’

এটি নাশকতার আগুন হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন ব্লকে তিন–চারটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটা রহস্যজনক।  

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২২২টি। এর মধ্যে ৯৯টি দুর্ঘটনাজনিত। ৬০টি নাশকতামূলক ও ৬৩টির কারণ জানা যায়নি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, আজ বেলা পৌনে তিনটার দিকে আশ্রয়শিবিরের ডি-১৫ ব্লকের একটি রোহিঙ্গা বসতির রান্নাঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। আগুন নাশকতামূলকভাবে লাগানো হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে একটু পর পর গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটছে। সেখানে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা কঠিন। দেশলাইসহ রোহিঙ্গা কিশোরকে আটকের ঘটনা তাঁর জানা নেই জানিয়ে ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, সবাই আগুন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যস্ত। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই কিশোরকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়নি।

স্থানীয় কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার দাবি, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত হয়ে থাকতে পারে। কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন চলছিল, ক্যাম্পে নাশকতামূলকভাবে আগুন লাগানো হবে। এর আগেও একাধিকবার নাশকতার আগুনে পুড়েছে বালুখালীর একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প।  

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০২১ সালের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালী এলাকার তিনটি (ক্যাম্প-৮, ৯ ও ১১) আশ্রয়শিবিরে। এ আগুনে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়েছিল। পুড়ে মারা যায় ৬ শিশুসহ ১৫ রোহিঙ্গা।