পাবনায় আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলে
পাবনায় আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলে

পাবনায় আনন্দঘন পরিবেশে আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

প্রখর রোদ, সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। এর মধ্যেই আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সকাল ৯টা বাজতেই তাদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে পাবনা জেলা শহরের সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল প্রাঙ্গণ। সেখানে আজ শুক্রবার ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হয় আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে আয়োজনে অংশ নেয় জেলা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী।

যক্ষ্মার বিস্তার রোধ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পরিচালনায় প্রথম আলো এই স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের আয়োজন করেছে। এতে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা।

সকাল সোয়া ৯টায় শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করেন সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. তালেবুর রহমান। এ সময় যক্ষ্মা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দেন পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন) মো. খায়রুল কবীর এবং আইসিডিডিআরবির প্রোগ্রাম অফিসার মো. জাকির হোসাইন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তালেবুর রহমান বলেন, ‘মানুষের জীবনে সুস্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড শিক্ষার্থীদের সেই সচেতনতা সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি। তাই এ আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।’

যক্ষ্মা একটি সংক্রামক ও জীবাণুঘটিত রোগ। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ নতুনভাবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। প্রায় ৪২ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। নিয়মিত, সঠিক মাত্রায়, ক্রমাগত ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ সেবন করলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।
আইসিডিডিআরবির প্রোগ্রাম অফিসার মো. জাকির হোসাইন

ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন খায়রুল কবীর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যক্ষ্মা, ডেঙ্গু, ভাইরাসের সংক্রমণ, রাসেলস ভাইপারসহ বিভিন্ন সাপে কাটলে করণীয় বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য কী, সেটা অসুস্থ না হলে বোঝা যায় না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানাটা খুবই জরুরি। স্বাস্থ্যবিধি মানলেই সুস্বাস্থ্য মেলে। ফলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

যক্ষ্মা বিষয়ে তিনি বলেন, যক্ষ্মা শরীরের যেকোনো অঙ্গে হতে পারে। তবে যক্ষ্মা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সচেতনতাই পারে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করতে। তাই সবাইকে যক্ষ্মার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যক্ষ্মার লক্ষণ ও প্রতিকারে করণীয় বিষয়ে জানতে হবে। প্রথম আলোর এ আয়োজন সেই সচেতনতা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখবে।

জাকির হোসাইন বলেন, যক্ষ্মা একটি সংক্রামক ও জীবাণুঘটিত রোগ। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ নতুনভাবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। প্রায় ৪২ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। নিয়মিত, সঠিক মাত্রায়, ক্রমাগত ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ সেবন করলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়। আধা ঘণ্টার পরীক্ষা পর্ব শেষে বিদ্যালয় মিলনায়তনে প্রশ্নোত্তর, গান, আবৃত্তি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে বিতর্কে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের পরিবেশনায় আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় । মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন। প্রশ্নোত্তর পর্বে সঠিক উত্তরদাতাদের উপহার হিসেবে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা ম্যাগাজিন উপহার দেওয়া হয়।

অলিম্পিয়াডে পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে প্রাইমারি, জুনিয়র ও সেকেন্ডারি—তিন ক্যাটাগরিতে ৩০ জন বিজয়ী নির্বাচিত হয়। এ ছাড়া দেয়াল পত্রিকার জন্য আরও নয়জনকে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়। বিজয়ীদের হাতে সনদ, মেডেল ও টি-শার্ট তুলে দেন অতিথিরা। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাবনা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল খালেক, সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাসুন্নাহার বর্ণা ও বন্ধুসভার সভাপতি নাহিদুজ্জামান।