বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক রিকশাচালক নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮২ জনের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত কমর উদ্দিনের স্ত্রী তহমিনা বেগম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় আজ মঙ্গলবার মামলাটি করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে হত্যার ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষক সেলিম হোসেন (৩৫) নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। নিহত সেলিম হোসেনের বাবা সেকেন্দার আলী বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলাটি করেন। তাঁদের বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়নের পালিকান্দা গ্রামে।
কমর উদ্দিনের বাড়ি বগুড়া শহরের আকাশতারা এলাকায়। মামলার আসামিদের মধ্যে চারজন সাবেক সংসদ সদস্য, কয়েকজন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান, বগুড়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পুলিশের সাবেক এসপি হাবিবর রহমান, বগুড়া-৩ ( দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল্লাহ আল মেহেদী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম, এ কে এম আসাদুর রহমান ও সাগর কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান, বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক দুই সভাপতি আল রাজি জুয়েল ও নাঈমুর রাজ্জাক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাশরাফি হিরো, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান, চেম্বারের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ী সড়কে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও মজিবর রহমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যসহ অন্য ছয় নেতার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় তাঁরা ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলা করেন। কমর উদ্দিন ছাত্র-জনতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে আসামি আনোয়ার হোসেন ও আমিনুল ইসলাম আগ্নেয়াস্ত্র তাক করেন। আনোয়ার হোসেন গুলি করেন। আমিনুল ইসলাম গুলি করে কমর উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৮২ জনকে আসামি করে বগুড়া সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।