মধ্যরাতে থানায় গিয়ে সেই অস্ত্র ও গুলি জমা দিলেন মনিরুজ্জামানের স্ত্রী

চৌদ্দগ্রামে ভাংচুর করা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত গাড়িটি
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল মজুমদারের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের সময় অস্ত্র হাতে থাকা মোস্তফা মনিরুজ্জামান ওরফে জুয়েলের অস্ত্রটি থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় মনিরুজ্জামানের স্ত্রী ফারজানা হক চৌদ্দগ্রাম থানায় ওই অস্ত্র জমা দেন। একই সঙ্গে ৮৬টি গুলিও জমা দেন। চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের দাবি, জমা দেওয়া অস্ত্রটি বৈধ। এটি পয়েন্ট ২২ বোরের রাইফেল। জার্মানির তৈরি। অস্ত্রের মালিক চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের নালঘর গ্রামের আলী আকবর মজুমদার ও মোস্তফা মনিরুজ্জামান ওরফে জুয়েল।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে দেওয়া চিঠিতে মোস্তফা মনিরুজ্জামান জুয়েলের স্ত্রী ফারজানা হক উল্লেখ করেন, ‘পয়েন্ট ২২ বোর রাইফেলের বৈধ লাইসেন্সধারী আমার স্বামী। তিনি হঠাৎ করে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর সম্মতিক্রমে ওই অস্ত্র ও গুলি নিরাপত্তার স্বার্থে আমি নিজে থানা হেফাজতে রাখার আবেদন জানাই।’

এ প্রসঙ্গে ফারজানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্ত্র ও গুলির নিরাপত্তার স্বার্থে আমার স্বামীর হয়ে সেটি থানায় জমা দিই। আমার স্বামী অসুস্থ, তাই তিনি থানায় যেতে পারেননি।’

ওসি বলেন, বৈধ এই অস্ত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর স্ত্রী থানায় জমা দেন। ঘটনার সময় অস্ত্রটি ব্যবহার হয়েছে কি না, সেটি পুলিশ তদন্ত করছে।

ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘জুয়েলের স্ত্রী শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় থানায় এসে জার্মানির তৈরি রাইফেলটি থানায় জমা দেন। আমরা সেটি অস্ত্রাগারে জমা রেখেছি।’ কিন্তু এখন কী কারণে জুয়েলের স্ত্রী অস্ত্র জমা দিলেন এ প্রশ্নে ওসি বলেন, বৈধ এই অস্ত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর স্ত্রী থানায় জমা দেন। ঘটনার সময় অস্ত্রটি ব্যবহার হয়েছে কি না, সেটি পুলিশ তদন্ত করছে।

এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার বলেন, ‘জুয়েল এই অস্ত্র এলাকায় এলে হাতে রাখেন। মানুষের সামনে প্রদর্শন করেন। মানুষকে ভয় দেখান। আমার ওপর হামলার দিনেও সেটি তাঁর হাতে ছিল। পুলিশ এখনো অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’

গত বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ৩০ মিনিটে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের এক লন্ডনপ্রবাসীর বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল নিজ গ্রাম মান্দারিয়াতে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারে করে যাচ্ছিলেন। বেলা তিনটার দিকে নালঘর পশ্চিম বাজার সামাদ মেম্বারের বাড়ির কাছে আসামাত্র তাঁর গাড়ির গতিরোধ করেন একই ইউনিয়নের নালঘর গ্রামের মোস্তফা মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে সাত থেকে আটজনের একটি দল। তখন চেয়ারম্যান শাহজালাল গাড়ি থেকে নেমে আত্মরক্ষার্থে একটি বাড়িতে দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় তিনি বাঁ হাতে ও দুই পায়ের হাঁটুতে আঘাত পান। হামলাকারীরা চেয়ারম্যানের গাড়িতে হকিস্টিক দিয়ে ভাঙচুর চালান। খবর পেয়ে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে এগিয়ে এলে মনিরুজ্জামান তাঁর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় তাঁর হাতে রাইফেল ছিল।