শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমা পেয়ে আবার আওয়ামী লীগে ফিরেছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁকে দল প্রাথমিক সদস্যপদ দিয়েছে। তাই এটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এটা সেন্ট্রাল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত। তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে আবার আওয়ামী লীগ দলে নিয়েছে। এটা আহামরি কিছু না। তিনি আমাদের কাছে বুদ্ধি-পরামর্শ চাইলে দেব। তিনি যেখানে কাজ করতে চান, সেখানেই কাজ করতে পারবেন।’
মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি, তাঁর কমিটিতে থাকার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে আজমত উল্লা খান বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সুযোগ নেই। বহিষ্কৃত হয়ে দলে ফেরায় আগামী দুই বছর তিনি কোনো পদ-পদবি পাবেন না। তারপরও কেন্দ্রীয় কমিটির যদি কোনো নির্দেশনা থাকে, সেটা হতে পারে।
আজ শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করে দলে ফেরানোর কথা জানানো হয়। চিঠিতে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে তাঁকে ক্ষমা করার কথা উল্লেখ করা হয়। আজ ওই চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। দলে ফিরিয়ে নেওয়ায় তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদ থেকেও তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। পরে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরকে দলে ফেরানো হয়।
গত মে মাসে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন জাহাঙ্গীর। সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে তাঁর মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র কেনেন। তবে ঋণখেলাপির কারণে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও টিকে যায় তাঁর মায়ের মনোনয়নপত্র।
প্রার্থিতা বাতিলের পর জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে কাজ করতে বলা হয়। তিনি তা না করে ‘বিদ্রোহী’ হন। ওই সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও নানা হুঁশিয়ারি দেন। একপর্যায়ে তাঁকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। নিজের প্রার্থিতা ফিরে না পেলেও মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে লড়ে যান জাহাঙ্গীর। পরে তাঁর মা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা রাতে তাঁর বাড়ি নগরের ছয়দানা এলাকায় ভিড় করতে থাকেন। পরে সেখানে তাঁরা আনন্দমিছিল বের করেন। নগরের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণেরও খবর পাওয়া যায়।
জাহাঙ্গীরের সমর্থক নাজমুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তিনি তাঁর মাকে জয়ী করেছেন। এবার তিনি দলে ফেরায় পরিপূর্ণতা ফিরে এসেছে। এখন মায়ের সঙ্গে মিলে নগরবাসীর উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল আমাকে ক্ষমা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে যেতে চাই। এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাইছি। এর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’
জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল বলেন, ‘তিনি দলে ফিরেছেন শুনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা দলীয়ভাবে চিঠি পাইনি। যেহেতু আমরা একই এলাকায় রাজনীতি করি। তাই আলাদাভাবে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি দলে ফিরলে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’