দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিতে ঝাঁঝরা কলেজছাত্র

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কলেজছাত্র কাউসার আহমেদ। রোববার দুপুর একটার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে সংঘর্ষে কাউসার আহমেদ (২০) নামের এক কলেজছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মাকহাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই কলেজছাত্রের গায়ে ২৮ থেকে ৩০টি ছররা গুলি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

আহত কাউসার খুলনার সানাউল্লাহ নূরীর ছেলে। তিনি মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মায়ের চাকরির সুবাদে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে নানাবাড়িতে থাকেন।

সংঘর্ষে লিপ্ত পক্ষ দুটি হলো—মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ শিকদার ও ইউনিয়নটির মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল সর্দার। নাহিদ মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ফয়সাল সর্দার ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মহসিনা হকের অনুসারী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে রিপন হোসেন ও মহসিনা হকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। দুই পক্ষের বিরোধে মোল্লাকান্দির ইউনিয়নের রাজনীতি এবং এখানকার মানুষও দুভাগে বিভক্ত। পূর্ববিরোধের জেরে রোববার সকাল থেকে নাহিদ ও ফয়সালের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। মাকহাটি এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে বন্দুক, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি ও গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় কলেজছাত্র কাউসার ও তাঁর মা মুন্সিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুই পক্ষের ছোড়া গুলিতে আহত হন কাউসার। তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সোহাগ হাসান বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আহত অবস্থায় ওই তরুণকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর শরীরে শটগানের ২৮ থেকে ৩০টি গুলি রয়েছে। আমরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

কাউসারের মা ফাতেমা বেগম মুন্সিগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি পদে চাকরি করেন। গতকাল মাকাহাটি গ্রামে করোনার টিকাদান কর্মসূচি ছিল। তাতে অংশ নেন তিনি। ফাতেমা বলেন, ‘মাকাহাটিতে গোলাগুলি চলছিল। আমার ছেলে কাউসারসহ আমরা সেখান থেকে চলে আসছিলাম। এক পক্ষের ফয়সাল সর্দারের ছোড়া গুলিতে আমার ছেলের শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।’

ফাতেমার দাবি, তাঁর শরীরেও গুলি লেগেছে। তবে হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা নিতে দেখা যায়নি তাঁকে। তাঁর শরীরেও কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চেয়েছেন ফাতেমা।

তবে গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ফয়সাল সর্দার। মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের কাছে ফয়সাল দাবি করেন, তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। একই দাবি করেন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ শিকদার। তিনি বলেন, ‘ওই এলাকার স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে। এখানে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমার নামটি নিয়ে আসা হচ্ছে।’

মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল থান্দার খাইরুল হাসান বেলা তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, প্রভাব বিস্তার করাকে কেন্দ্র করেই নাহিদ ও ফয়সাল পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। ঘটনার মাঝখানে পড়ে ওই কলেজছাত্র গুলিবিদ্ধ হন। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা পলাতক। তাদের আটক করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।