গত বছর জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৬৮০ জন। ১৫ বছরের নিচে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
সিলেটে চা-বাগানের বাসিন্দাদের মধ্যে যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। চা–বাগানের জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকেরা বলেন, চা–বাগান এলাকাগুলোতে অপুষ্টিতে ভোগা লোকজনের হার তুলনামূলক বেশি। তাই চা-বাগানের বাসিন্দাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে, নেওয়া হচ্ছে বিশেষ কর্মসূচি।
এর বাইরে সিলেটে শিশুদের মধ্যেও সংক্রমিত হচ্ছে যক্ষ্মা। সিলেট জেলায় গত বছর ১৫ বছরের নিচের শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত বছর জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৬৮০ জন। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি’।
সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ২০২০ সালে ৩ হাজার ৮৪২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫৪৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত বছর ২০২২ সালে এর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬৮০ জন। ২০২২ সালে শনাক্ত হওয়া যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ৪১৮টি শিশু ছিল—যাদের বয়স ১৫ বছরের কম। এর মধ্যে ২০২১ সালে চিকিৎসাধীন যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ১৪৬ জন।
সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, চা–বাগানের জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। চা–বাগানগুলোর অনেক বাসিন্দা অপুষ্টিতে ভোগেন। এ জন্য চা–বাগানগুলোতে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা চা–বাগানের শ্রমিক এবং বাসিন্দাদের নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে চা–বাগানের ঘরগুলোতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সন্দেহজনক রোগীদের কফ সংগ্রহ করে পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা জানান, যক্ষ্মা যে শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়ায়, সেটি ভুল ধারণা। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ে। রোগ কিংবা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসেও আক্রমণ করতে পারে যক্ষ্মার জীবাণু। এ রোগ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় এবং দেহে প্রবেশ করে প্রথমে ফুসফুসে আশ্রয় নেয়। যক্ষ্মায় আক্রান্ত সব রোগীর কাছ থেকেই জীবাণু ছড়ায় না। যাদের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাদের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়ও বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়ায়। গর্ভবতী নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, ক্যানসার ও এইচআইভি আক্রান্ত মানুষও রয়েছেন ঝুঁকিতে। ঝুঁকির তালিকায় আছেন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরাও।
যক্ষ্মার উপসর্গগুলো হলো দীর্ঘমেয়াদি কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, ওজন হ্রাস, জ্বর এবং রাতে ঘাম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সিলেটের বিভাগীয় কনসালট্যান্ট শহীদ আনোয়ার বলেন, চা–বাগানগুলোতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে বহনযোগ্য এক্স-রে যন্ত্র চা–বাগানগুলোতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে চা–বাগানের শ্রমিকদের বুকের এক্স-রে করতে আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হবে না।
শহীদ আনোয়ার আরও বলেন, যক্ষ্মা নির্মূল করা সম্ভব নয়। যেহেতু এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, এ জন্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সিলেটে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।
যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে সিলেটে গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আয়োজনে সকাল সাড়ে ১০টায় শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা শেষে সিভিল সার্জন কার্যালয় ‘পটের গান’ হয়।