জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগ কর্মীর গায়ে ধাক্কা থেকে মারামারি, উত্তেজনা, দোকান ভাঙচুর

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যকার উত্তেজনায় বটতলায় অবস্থান নেন মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাত আটটায়
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মীর গায়ে ধাক্কা লাগার জের ধরে দুটি আবাসিক হলে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এর মধ্যে একপক্ষের শতাধিক নেতা-কর্মী রড, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় অবস্থান নেন। অন্য পক্ষও হলের ভেতরে মারামারির প্রস্তুতি নেয়। এ সময় বটতলার দুটি দোকানে ভাঙচুরও চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রভাগে ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা শান্ত হন।

পুরো বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, এটি ছাত্রলীগের ‘রাজনৈতিক সমস্যা’ হওয়ায় বিষয়টি তাঁরা-তাঁরাই সমাধান করেছে। কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় ‘পদক্ষেপ নিতে পারছেন না’ তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। একদফা মারধর, অস্ত্রসহ মহড়া ও আলোচনা শেষে তা শেষ হয় রাত ৯টার পর। বিবাদমান পক্ষ দুটি হলো—মীর মশাররফ হোসেন হল ও মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা জানিয়েছেন, গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ফুটবল খেলছিলেন মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র খালিদ হোসেনসহ কয়েকজন। এ সময় মাঠে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের কর্মী সৌরভ কাপালি। ফুটবলের পেছনে ছুটতে গিয়ে সৌরভের সঙ্গে ধাক্কা লাগে খালিদের। এ নিয়ে দুজনের বচসা বাঁধে। একপর্যায়ে খালিদকে ঘুষি দেন সৌরভ। এরপর সেখানে উপস্থিত থাকা মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের কর্মী নিহান নিবিড়, সজিব হাসান ও হিমালয় রাজপালসহ কয়েকজন খালিদকে মারধর করেন। পরে খালিদ ও সৌরভ নিজ নিজ হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ফোন দেন। এ সময় খালিদকে মোটরসাইকেলে তুলে মওলানা ভাসানী হলে নেওয়ার চেষ্টা করলে মীর মশাররফ হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁকে আটকান।

যেহেতু এটা ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সমস্যা তাঁরা এটা নিজেরাই সমাধান করতে চেয়েছে। অভিযোগ না পাওয়ায় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না
আ স ম ফিরোজ উল হাসান, প্রক্টর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রথম দফার এ বিবাদে অংশ নেওয়া সৌরভ কাপালি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সজীব হাসান পড়েন সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। নিহান নিবিড় ইতিহাস বিভাগের ও হিমালয় রাজপাল নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে খালিদ হোসেন মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এ ঘটনার জেরে রাত আটটার দিকে রড, লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অবস্থান নেন মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী। তাঁরা বটতলার দুটি দোকান ভাঙচুর করেন। মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও হলের ভেতরে মারামারির প্রস্তুতি নেন। পরে মওলানা ভাসানী হলের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান বটতলায় যান। টিমের অন্য সদস্যদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় আলোচনা করেন। পরে মীর মশাররফ হোসেন হলের নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে চলে যান।

সৌরভ কাপালি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ফোনে কথা বলার সময় পেছন থেকে ধাক্কা দেয় সে (খালিদ)। এ নিয়ে তাঁর (খালিদের) সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁর বন্ধুরা তেড়ে আসে। পরে সেখান থেকে আমি চলে আসি। আর কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

তবে সৌরভের দাবি নাকচ করে দেন খালিদ হোসেন। তাঁর ভাষ্য, খেলার সময় সামনে চলে এলে সৌরভকে হাত দিয়ে সরিয়ে দেন তিনি। এতেই ক্ষিপ্ত হয় তাঁর মুখে ঘুষি বসিয়ে দেন সৌরভ। পরে সৌরভের অন্য সঙ্গীরা তাঁকে মারধরে অংশ নেন।

হাতাহাতি, মারামারি ও ঘণ্টাব্যাপী উত্তেজনার বিষয়টিকে ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে ‘ভুল–বোঝাবুঝি’ বলে মনে করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটে। পরে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে।’

প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘যেহেতু এটা ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সমস্যা তাঁরা এটা নিজেরাই সমাধান করতে চেয়েছে। অভিযোগ না পাওয়ায় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করবে।’