সীমান্ত থেকে রাজশাহীতে আসা বিদেশি অস্ত্রের একটি চালানসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এই চালানে রয়েছে চারটি বিদেশি রিভলবার, তিনটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন, আট রাউন্ড তাজা গুলি, আটটি গুলির খোসা ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম।
আজ শুক্রবার ভোরে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী থানাধীন কাপাশিয়া পাহাড়পুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, কাপাশিয়া এলাকার মো. আতিকুর রহমান ওরফে আতিক (৩৫), রাজশাহী নগরের চরকাজলা এলাকার মো. শাহীন আলী (২৫) ও নগরের কাজলার ধরমপুর এলাকার মো. শহিদুল (২৬)। আতিকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন শাহীন আর শহিদুল।
এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব–৫। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র্যাব-৫–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক উত্তরবঙ্গে এটিই অবৈধ অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান, যা র্যাব আটক করেছে। আটক ব্যক্তিরা চিহ্নিত শীর্ষ অস্ত্র ব্যবসায়ী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, র্যাব-৫ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, অস্ত্রের একটি বড় চালান সীমান্তবর্তী চর এলাকা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় এসেছে। এরপর র্যাবের মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এর ধারাবাহিকতায় তাঁরা কাপাশিয়া পাহাড়পুর এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী দলের সক্রিয় সদস্য আতিকের বাড়িতে অভিযান চালান। তাঁরা সেখানে আতিকসহ তিনজনকে আটক করেন। আতিক অবৈধ অস্ত্রগুলো তাঁর মুরগির খামারের পাশে একটি ছোট ঘরে রেখেছিলেন। ঘরটির ভেতরের দিক কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। প্রথমে আতিক অস্ত্রের কথা অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে নিজের হাতে অস্ত্রগুলো বের করে দেন। একই সঙ্গে তাঁর খামারে রাখা বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণগুলোও বের করে দেন তিনি।
ওই খামার থেকে চারটি বিদেশি রিভলবার, তিনটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ম্যাগাজিন, আট রাউন্ড তাজা গুলি, আটটি গুলির খোসা, এক কেজি ১০০ গ্রাম গান পাউডার, বিস্ফোরক দ্রব্য বানানোর জন্য ছোট ৭৫০ গ্রাম পাথর, স্প্লিন্টার হিসেবে ব্যবহৃত লোহার বল ও তাঁরকাটা, দুটি মোবাইল ফোনসেট ও চারটি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
আতিককে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, ভারত সীমান্তবর্তী অজ্ঞাত স্থান থেকে মো. তানজিম (২৭) ও মো. আবদুর রহিম (২৮) নামে দুই ব্যক্তির মাধ্যমে অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ওই সব চক্রের বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিদের অস্ত্র সরবরাহ করতেন তাঁরা। এদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজশাহী তথা বাংলাদেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করা। তাঁদের আতিক বেশ কিছু নাম বলেছেন। তাঁদের আটকে অভিযান অব্যাহত আছে। তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা পদধারী কেউ কি না, সে বিষয়েও র্যাব খোঁজ নিচ্ছে।
আতিক র্যাবকে আরও জানিয়েছেন, তাঁর কাছে মোট ১০টি অস্ত্র ছিল। তিনটি অস্ত্র তানজিম ও রহিম তাঁদের কাজে ব্যবহারের জন্য নিয়ে গেছেন। ওই দুজনের বাড়ি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন র্যাব-৫–এর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস শাকিব, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারুফ হোসেন। এই দুজনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।