রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রধান কার্যালয়
রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রধান কার্যালয়

রাজশাহীতে ভাড়ার টাকা দিচ্ছে না, ভবনও ছাড়ছে না বিএনপি

বাড়ির মালিকপক্ষের দাবি, ভবনের দুই কক্ষ ছাড়তে অনেকবার বলা হলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছাড়ছেন না।

রাজশাহী বিএনপির নেতারা ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ভবনের দুটি কক্ষে গেড়ে বসেছেন। দলটির নেতারা বাড়ির মালিক পক্ষকে বকেয়া ভাড়াও পরিশোধ করছেন না, ভবনও ছাড়ছেন না। বাধ্য হয়ে নেতাদের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু নানা অজুহাতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ওই বাড়ি ছাড়ছেন না। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী নগরের মালোপাড়া এলাকার কাবিল ম্যানশন নামের চারতলা বাড়িটির দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়। ওয়ারিশসূত্রে ওই ভবনের মালিক আটজন। সবাই সম্পর্কে ভাই–বোন। এই ভবন থেকে বিএনপির কার্যালয় সরাতে গত ১৭ মে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেন তাঁরা। এত দিন ভবনটির সবকিছু দেখভাল করতেন ভাই–বোনদের সবচেয়ে বড়জন আবদুল ওহাব। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। এর পর থেকে প্রবাসে থাকা তাঁর ভাই শামস আলম দেখভাল করছেন।

বাড়ির মালিক আমাদের থাকতে দিয়েছেন, তাই আমরা আছি। যখন বলবেন, তখনই বাড়ি ছেড়ে দেবো। আর বকেয়া ভাড়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এরশাদ আলী, আহ্বায়ক, রাজশাহী মহানগর বিএনপি

বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৮০০ বর্গফুটের দুটি কক্ষ ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে মাসিক ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট তাঁদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আবদুল ওহাব পরের মাসেই তাঁদের কক্ষ ছাড়ার জন্য নোটিশ দেন। এরপর উকিল নোটিশ দেন। তারপরও বাড়ি না ছাড়লে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন।

পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন সূত্রে জানা যায়, কক্ষ দুটি ভাড়া নেওয়ার সময় বিএনপির নেতারা ব্যক্তিগত কার্যালয় করার জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির দলীয় কার্যালয় হিসেবে অবৈধ ও জবরদস্তিভাবে ব্যবহার করে আসছে। ফলে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও আনে বাড়ির মালিকপক্ষ। তাঁদের দাবি, বিএনপির দলীয় কার্যক্রমের কারণে ওই আবাসিক ভবনের অংশীদারেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, কাবিল ম্যানশন ভবনটি ১৯৬৪ সালের তৈরি। ফলে এটি অত্যন্ত পুরোনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সব অংশীদার একমত হয়ে ভবনটি ভেঙে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির দখলে থাকা ভবনের কক্ষ দুটি খালি করার জন্য ডাকযোগে লিখিত নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু কক্ষ খালি না করায় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হতে অপরাগতা প্রকাশ করে। আবেদনে আরও বলা হয়েছে, চুক্তিপত্রে বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করার শর্ত থাকলেও বিএনপির নেতারা লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছেন।

মালিকপক্ষ জানায়, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী (ইশা) ও অন্যদের ঘর দুটি খালি করার জন্য অসংখ্যবার মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। বিএনপির নেতারা কথা দিয়েও ভবন ছাড়েননি। সব সময় বিভিন্ন অজুহাত, টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করে আসছেন।

ভবনের অংশীদারেরা জানান, উকিল নোটিশে সাত দিনের মধ্যে বিএনপি নেতাদের বকেয়া পাওনাসহ কক্ষ দুটি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের কিছুদিন আগে বকেয়া ভাড়া না দিয়েই তাঁরা ঘর ছেড়ে দেন। এরপর বাড়ির মালিক তখন নতুন করে বাড়ি নির্মাণের জন্য কাবিল ম্যানশন ভাঙতে শুরু করেন। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন হলে বিএনপির নেতারা আবার এসে ওই ভবনের দুই কক্ষ দখল নেন।

এই অবস্থায় কয়েক দিন আগে আবদুল ওহাব মারা যান। তাঁর ভাই শামস আলম দেশের বাইরে থাকেন। তিনি এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, বিএনপি কার্যালয়ের আগের সাইনবোর্ডটি ছোট ছিল। এবার ওঠার সময় তাঁরা বড় সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। বাধ্য হয়ে তাঁরা ঘর ভাঙা স্থগিত রেখেছেন। তাঁদের সমস্যার কথা বারবার রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ককে বলা হলেও তিনি কর্ণপাত করছেন না। এর মধ্যে কক্ষ দুটির বকেয়া ভাড়া বেড়ে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা হয়েছে।

গত বৃহস্পাতিবার সন্ধ্যায় এই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি নেতারা আগের মতোই বসে আড্ডা দিচ্ছেন। একজন নেতা জানান, সাড়ে সাতটার দিকে সেখানে বিএনপির একটা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্যই তাঁরা বসে রয়েছেন।

উকিল নোটিশ দেওয়ার পরও ওই ভবন না ছাড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়ির মালিক আমাদের থাকতে দিয়েছেন, তাই আমরা আছি। যখন বলবেন, তখনই বাড়ি ছেড়ে দেবো। আর বকেয়া ভাড়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’