প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ

‘এই চাউল-ডাইল দিয়া পেট ভইরা খাইমু’

সুনামগঞ্জে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ পেয়ে খুশি সদর উপজেলার পৈন্দা গ্রামের রহিমা বেগম। বুধবার জেলা সদরের পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে বন্যায় বিপাকে পড়া ৫০টি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দিয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। আজ বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলির বিভিন্ন গ্রামের ৫০টি পরিবারে সদস্যদের হাতে এই সহায়তা তুলে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে এ ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এসব পরিবারের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পত্রিকা বিক্রয়কর্মীরাও ছিলেন।

প্রতিটি পরিবারের জন্য পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি আলু, আধা লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি লবণ, দুটি খাবার স্যালাইন, একটি সাবান ও একটি গ্যাস লাইটার বরাদ্দ ছিল।

সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা রহিম উদ্দিন (৫২) প্রতিদিন শহরে এসে চানাচুর বিক্রি করেন। তাঁর এই আয়ে টেনেটুনে ছয়জনের সংসার চলে। বন্যায় ঘরে কোমরপানি উঠেছিল। তাই আশ্রয় নিয়েছিলেন স্কুলে। প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে খুশি রহিম উদ্দিন বলেন, ‘আয়রোজগার নাই। ঘর অত মানুষ। কিতা খাইতাম, কিলা চলতাম। বিপদে যা পাইছি বড় উপকার অইব। এই চাউল-ডাইল দিয়া পেট ভইরা খাইমু।’

শহরের বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আফজান বিবি (৫০) জানান, ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় চার দিন আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। চার মেয়ে তাঁর। তিনি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। আফজান বিবি বলেন,‘পরতি বছর বইন্যা অয় আর আমরা ভোগান্তিত পড়ি। থাকা-খাওয়ার কষ্ট বাড়ে। ঘরথাকি ওখন পানি নামছে। সবতা নষ্ট। দুইবেলা ভাত খাওয়ার উপায় নাই। আপনারা যে খানি দিছইন, ইতাদি কয় দিন ভালা যাইব।’

হুইলচেয়ারে বসে ত্রাণ নিতে আসেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত আখলিছুর রহমান (৬২)। খাদ্যসামগ্রী পেয়ে বলেন,‘যারা দিছইন, তারাল লাগি মন থাকি দোয়া করমু।’

খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে সুনামগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা মোহাম্মদ রাজু আহমেদ, বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি প্রদীপ পাল, বর্তমান সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তাজকিরা হক, সদস্য কাওসার আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায় ১০০ এবং সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ের ইসলামপুর গ্রামে ১০০টি বন্যার্ত পরিবারকে একইভাবে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জে ১৬ জুন থেকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এখন পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। জেলার ১২টি উপজেলায় বন্যায় ১ হাজার ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ৮ লাখ মানুষ। ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয় প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। পানি নামায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িঘরে ফিরছেন।

প্রথম আলো ট্রাস্টের এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি। বন্যার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনুদানের টাকায় বন্যার্ত মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল। হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশান অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।