চার দিন বন্ধ থাকার পর সিলেট নগরে আজ বুধবার সকাল থেকে বিপণিবিতান ও দোকানপাট খুলেছে। এ ছাড়া দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। আজ সকালে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে দূরপাল্লার বাস। তবে বেলা আড়াইটার পর বিভাগের বাইরে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। এদিকে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ আছে।
গত সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এ পরিস্থিতিতে কারফিউ জারি করা হয়। সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।
আজ সকাল থেকে সিলেট নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা যায় তাঁদের।
সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারই বেশি। নগরের জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, শাহজালাল উপশহর এলাকার বিভিন্ন বিপণিবিতান খোলা। শাহজালাল উপশহর এলাকায় বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জের জন্য যেখানে গত কয়েক দিন ধরে মানুষের ভিড় ছিল, সেখানে লোকজন কম। তবে বিদ্যুতের কার্ড বিতরণ করা কার্যালয়ে কিছুটা ভিড় ছিল।
সিলেট নগরের মীরাবাজার এলাকার বাসিন্দা রিপন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকেরা। তাঁদের ঘরে তিনটি মিটার। এর মধ্যে একটির কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেটি রিচার্জ করতে তিন দিন ঘুরেছেন। কিন্তু ভিড় দেখে কিনতে পারেননি। তবে আজ ভিড় কম দেখে কিনেছেন। এক সঙ্গে তিনটি মিটার রিচার্জ করেছেন।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মাদ আবদুল কাদির বলেন, গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। যার ফলে অনেকে নিজেদের মিটারে বিদ্যুতের ইউনিট থাকার পরও কার্ড কিনতে ভিড় জমিয়েছিলেন। এতে ভিড় বেশি হয়েছিল। তাঁদের গভীর রাত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ বিভাগের কার্ড বিক্রয় করা প্রতিষ্ঠানে ভিড় জমিয়েছেন।
ব্যবসায়ী সুকোমল রায় বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁদের বিপণিবিতান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কারফিউর কারণে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আজ সকাল থেকে কারফিউ শিথিল হওয়ায় বিপণিবিতান খুলেছে। তবে বিকেল পাঁচটার পর ফের বন্ধ করার ঘোষণা রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার খোলা থাকবে কি না, সেটি সন্ধ্যার পর জানা যাবে।
সুকোমল রায় আরও বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুললেও ক্রেতা নেই। এতে বেচাকেনাও নেই। এরপরও দোকানপাট ছয় দিন পর খুলেছে—এটিই স্বস্তির বিষয়।
বন্দরবাজার মধুবন মার্কেটের ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, টুকটাক কিছু বেচাকেনা হয়েছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। যানবাহন চলাচল বেড়েছে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে।
এদিকে সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ট্রেন চলাচল কবে থেকে চালু হবে, এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। বন্ধ সময়ের মধ্যে যাঁরা ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন, সেই টিকিট ফেরত দেওয়ার নির্দেশনাও আসেনি। পরে এ বিষয়ে জানানো হবে।