ঈদ পালন করতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথ হয়ে মানুষ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। বৃষ্টিতে ভিজেই বাস থেকে নেমে মালামাল হাতে নিয়ে যাত্রীরা ফেরিতে ও লঞ্চঘাটে আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের কর্মস্থলের মানুষ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও পাটুরিয়া ঘাটে ঈদে বাড়ি ফেরা এসব মানুষজনের চাপ বেড়ে যায়। আজ সকালে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কম থাকলেও বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বিভিন্ন কর্মস্থল থেকে বিভিন্ন পরিবহনের লোকাল বাসে করে মানুষজন পাটুরিয়া ঘাটে আসছেন। পাটুরিয়া পুরাতন ট্রাক টার্মিনালে এসব যাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে বৃষ্টিতে ভিজে আধা কিলোমিটারের বেশি পথ পায়ে হেঁটে লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে আসছেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালামাল এবং শিশুদের নিয়ে চলাচলে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেশি। এরপর লঞ্চে ও ফেরিতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পারাপার হয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন।
ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন ফরিদপুরের দম্পতি সোহেল হোসেন ও সাথী আক্তার। আজ সকাল নয়টার দিকে ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ফেরি ঘাটে আসেন তাঁরা। সোহেল হোসেন বলেন, ‘বাড়ি না গেলে ঈদই মনে হয় না। তাই কষ্ট হলেও বৃষ্টির মধ্যেই বাড়ি যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষজনে রাজধানীতে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম প্রবেশদ্বার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। বিগত ঈদের সময়ে পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের প্রবল চাপ পড়ে। চরম দুর্ভোগ সঙ্গে নিয়েই যাত্রীরা বাড়িতে যান। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমে গেছে। এবার ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৮টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে নদীতে পানি বাড়ায় এবং বৃষ্টির মধ্যে ফেরিগুলোকে নৌপথে চলাচলে স্বাভাবিক তুলনার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় বেশি লাগছে। পানি বাড়ায় পাটুরিয়ার পাঁচটি ফেরিঘাটের সব কটি পন্টুন নিম্নস্তর থেকে মধ্যম স্তরে উঠানো হয়েছে।
এবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ২২টি ছোট লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাটুরিয়া ঘাটের লঞ্চ সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দী। তিনি বলেন, নদীতে পানি বাড়ায় এবং স্রোতের কারণে যাত্রী পারাপারে কিছুটা সময় বেশি লাগছে।
স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িতে করেও মানুষজন গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তবে আজ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও কমে এসেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জেলার শিবালয় উপজেলার টেপড়া থেকে টেপড়া-নালী সড়ক হয়ে এসব ব্যক্তিগত গাড়ি পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে যাচ্ছে। এরপর ওই ঘাট দিয়ে ফেরিতে উঠে এসব গাড়ি ও যাত্রীরা নদী পারাপার হচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, আজ ভোর থেকেই বৃষ্টির মধ্যেও ঈদে ঘরমুখী যাত্রী পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসছেন। বৃষ্টিতে কিছুটা ভোগান্তি হলেও ফেরির জন্য কোনো যানবাহন ও যাত্রীকে ফেরির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। এই ঘাট হয়ে অনেকটা স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা।