সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) উপচে প্রবল বেগে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নতুন করে আরও এলাকা প্লাবিত হচ্ছিল।
স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে বাঁধ উপচে পানি ঢোকায় জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত উপজেলার নদী–তীরবর্তী বিভিন্ন বাঁধ উপচে বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলায় ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, কোথাও বাঁধ ভেঙেছে। কোথাও বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকছে। গতকাল দিবাগত রাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত বারহাল ইউনিয়নের ৩৩টি গ্রামসহ উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।
সূত্র জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভারত সীমান্তবর্তী বরাক নদ থেকে প্রবল বেগে পানি এখন জকিগঞ্জের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে ঢুকছে। এতে উপজেলার অনেক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ রাস্তাঘাটও পানিতে ডুবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ আছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, উপজেলার নিজগ্রাম ও নালুহাটি গ্রামের পাশে সুরমা নদীর ডাইক এবং ছবড়িয়া, বাখরশাল, রাবাই, ভুঁইয়ারমোড়া ও মাঝরগ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ডাইক উপচেও পানি ঢুকছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বাঁধ মেরামত করলেও এমন সমস্যায় পড়তে হতো না।
এলাকাবাসী জানান, সিলেট থেকে প্রায় ৯২ কিলোমিটার দূরে জকিগঞ্জের অবস্থান। এটি জেলার সবচেয়ে দূরের উপজেলা। ভারতের করিমগঞ্জের বরাক নদের দুটি শাখা সুরমা ও কুশিয়ারা নদী। এদের মিলনস্থল জকিগঞ্জের অমলশিদ এলাকা। অমলশিদে একটি ডাইক আছে। বরাক থেকে পানি এসে প্রথমে সরাসরি ডাইকে আঘাত করে। এরপর পানি ভাগ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারায় প্রবাহিত হয়।
সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মাধ্যমেই মূলত সিলেট বিভাগের প্রায় ১০০টি নদ-নদীতে পানি প্রবাহিত হয়। এখন জকিগঞ্জ এলাকায় ডাইক ভাঙার পাশাপাশি পানি উপচে বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢোকায় পুরো সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিম প্রথম আলোকে বলেন, ডাইড ভেঙে নয়; ডাইক উপচে উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। মানুষজনকে নিরাপদে সরে আসতে সহায়তা করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন ২৪ ঘণ্টা তৎপর আছে।