দীর্ঘদিনের গরমের শেষে হেমন্ত আসে প্রশান্তি নিয়ে। সকালে আমনের সবুজ মাঠে ফোঁটা ফোঁটা শিশির জমে থাকা হেমন্তের বৈশিষ্ট্য। সকালের উদীয়মান সূর্যের আলোয় শিশির চিকচিক করে। সে অর্থে কার্তিকের প্রথম দিন থেকেই যেন হেমন্ত এসেছে ময়মনসিংহের প্রকৃতিতে।
হেমন্ত এলেও শরৎ যেন এখনো বিদায় নেয়নি। কারণ, শরতের ফোটা কাশফুলগুলো সামান্য বিবর্ণ হলেও এখনো রয়ে গেছে প্রকৃতিতে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ নগরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গেলে চোখে পড়ে বিস্তীর্ণ কাশবন।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে শরৎ আর হেমন্তের এমন সম্মিলন মানুষের মনে ও শরীরে মিশ্র অনুভূতি জাগায়। সকালে ঘুম ভাঙতেই চোখে পড়ে হেমন্তের নরম প্রকৃতি, শীতের আগমনী ভাব। বেলা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। দুপুরের রোদ প্রখর থাকে। তখন বেশ গরম অনুভূত হয়। বিকেল থেকে আবারও নরম হয়ে ওঠে প্রকৃতি। তাপমাত্রা কমতে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ জেলায় এখন রাত ১১টার পর থেকে সকাল পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে সেটা ৩২ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে।
ময়মনসিংহ নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার হেমন্তের ঠিক প্রথম দিন থেকেই ভোরে কুয়াশা পড়তে দেখা গেছে। তিন থেকে চার দিন পর ভোরের এমন কুয়াশা আর দেখা যাচ্ছে না। তবে সকালে আমন ধানের সবুজ মাঠে অথবা ঘাসে শিশিরবিন্দু জমে থাকতে দেখা যায়। গ্রামের দুপুরগুলোও তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে গাছের ছায়ায় দাঁড়ালে শরীর জুড়ায়।
কবি আহমদ জামাল জাফরী বলেন, হেমন্তকাল বাংলাদেশের গ্রামগুলোয় খুব বেশি উপভোগ করা যায়। এ ঋতুতে গ্রামে গ্রামে নতুন ধানের উৎসব হয়। দিনে কৃষকের ধান কাটার আনন্দ, কিষানির ধান শুকিয়ে গোলায় ভরার আনন্দ। ঘরে ঘরে হয় নতুন ধানের পিঠা। রাতে আবার কোথাও কোথাও গানের আসরও বসে। সব মিলিয়ে হেমন্তকালে গ্রামগুলো যেন রঙিন হয়ে ওঠে।
হেমন্ত এলেও ময়মনসিংহের প্রকৃতিতে এখনো শরৎ বিলীন হয়নি। ব্রহ্মপুত্রের শহর বলে পরিচিত এই নগর নদের পাড় ধরে বহুদূর বিস্তৃত। নগরের কাচারিঘাট, থানার ঘাট, পাটগুদাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চোখে পড়ে ব্রহ্মপুত্রের দুই ধারের কাশবন। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষেরা এখনো বিকেল হলে কাশবনে বেড়াতে যান। হেমন্তের বিকেলে কাশবনে বেড়াতে বেড়াতে সন্ধ্যা নেমে এলে আবারও শীতের আগমনী ভাব যেন প্রকৃতিতে।
কবি শামসুল ফয়েজ বলেন, ‘শরৎ এবং হেমন্ত দুটিই আমার খুব প্রিয় ঋতু। আমার মতো বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছেই এ দুটি ঋতু অত্যন্ত প্রিয় বলে মনে হয়। শরতের বৈশিষ্ট্য যেমন কাশফুল, হেমন্তের তেমন শিউলি। হেমন্তের সকালের কুয়াশা আর বিকেলে সোনালি ধানের মাঠ অপার সৌন্দর্যের। আমাদের সময় হেমন্তকালে বেড়াতে যাওয়া আর পিঠা-পুলির ধুম পড়ত। এখনো অনেকের মধ্যে এসব সংস্কৃতি আছে। তবে উদ্যাপনের পার্থক্য এসেছে। এখন প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরে বেড়ান, ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন।’