টাঙ্গাইল জেলার মানচিত্র
টাঙ্গাইল জেলার মানচিত্র

কালিহাতী উপজেলা নির্বাচন

লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও সিদ্দিকী পরিবারে

সিদ্দিকী পরিবারের আধিপত্য রোধ করতে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে একমাত্র কালিহাতী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মাত্র একজন নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তিনি হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা (মোটরসাইকেল প্রতীক)। তবে স্বস্তিতে নেই তিনি। নিজ দলের আর কেউ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও তাঁকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে আলোচিত সিদ্দিকী ভাইদের ছোটজন এস এ এম সিদ্দিকী ওরফে আজাদ সিদ্দিকীকে (আনারস প্রতীক)।

আজাদ সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এবং সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ছোট ভাই। তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সরকারি সা’দত কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি)। আজাদ সিদ্দিকী বর্তমানে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

আনোয়ার হোসেন ও আজাদ সিদ্দিকী ছাড়াও কালিহাতীতে আরও একজন প্রার্থী হয়েছেন। তিনি হলেন হাসমত আলী (দোয়াত কলম প্রতীক)। ২১ মে কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, সিদ্দিকী পরিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও সংহত করতে চাইছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সিদ্দিকী পরিবারের আধিপত্য রোধ করতে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে।

কালিহাতীর রাজনীতিতে সিদ্দিকী পরিবারের একটি প্রভাব রয়েছে। এই পরিবারের বড় সন্তান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন।

২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। ২০১৪ সালে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়।

লতিফ সিদ্দিকী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তাঁর পাশে ছিলেন ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকী ও আজাদ সিদ্দিকী। এবার আজাদ সিদ্দিকী তাঁর বড় দুই ভাইয়ের সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকী সরাসরি নির্বাচনের মাঠে না নামলেও নেপথ্যে থেকে ভাইয়ের জন্য কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের অনুসারীরা। অন্যদিকে, কাদের সিদ্দিকী একাধিক দিন কালিহাতীর বিভিন্ন এলাকায় ছোট ভাইয়ের পক্ষে গণসংযোগ করেছেন। আজাদ সিদ্দিকী বলেন, কালিহাতীর প্রতিটি অঞ্চলের ভোটারদের কাছ থেকে তিনি সাড়া পাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর যেসব কর্মী মাঠে কাজ করেছেন, তাঁদের নিয়েই আজাদ সিদ্দিকী উপজেলা নির্বাচনে কাজ করছেন। প্রতিদিন গণসংযোগ করছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার আজাদ সিদ্দিকী পাইকরা ইউনিয়নে ও গতকাল শুক্রবার বল্লা ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন।

অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন মোল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতারা আনোয়ার মোল্লার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। সাবেক সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনসার আলী, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আবু নাসেরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা আনোয়ার মোল্লাকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন।

জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে পেরেছি। জনগণের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’ আজাদ সিদ্দিকীকে ইঙ্গিত করে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনি (আজাদ সিদ্দিকী) নির্বাচনের আগে টাঙ্গাইল থেকে এসে কালিহাতীর ভোটার হয়েছেন। আমি মানুষের মাঝেই আছি। তাই জনগণ আমাকেই ভোট দেবে বলে বিশ্বাস করি।’

প্রচার-প্রচারণায় আনোয়ার হোসেন ও আজাদ সিদ্দিকীর নির্বাচন এরই মধ্য জমে উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক শহীদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন জইম্যা উঠছে। এহন আওয়ামী লীগ ও সিদ্দিকীগো মধ্যে নির্বাচন হইতাছে। কেউ কারো থিকা কম না।’

অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসমত আলী মাঠে থাকলেও তেমন তৎপর নন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়াও কালিহাতী উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।