শামসুল হক (টুকু)
শামসুল হক (টুকু)

পাবনায় এবার ছেলে, ভাইসহ শামসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা

সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে এবার দখল, চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁর ছেলে বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন ও তাঁর ভাই সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেনসহ আরও ১০ জনকে।

গতকাল বুধবার পাবনা আমলি আদালত-১–এ মামলাটি দায়ের করেন বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার মির্জা মেহেদী হাসান। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী ও বেড়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বাদী ও আসামিরা একই মহল্লার বাসিন্দা।

আদালতে দায়ের করা মামলার নথি ও বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ২০১৪ সালের ৬ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বৃশালিখা মহল্লার বাসিন্দা মির্জা মেহেদী হাসানের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মেহেদী হাসানের পৈতৃক জমিতে থাকা ২০টি দোকান ও ৫০টি গুদাম দখল করে নেন। সেই সঙ্গে ওই সব দোকান ও গুদামের ভাড়া না তুলতে বাদীকে হত্যার হুমকি দেন তাঁরা। ২০১৪ সাল থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হুমকি দিয়ে ভাড়া তুলে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই সময় শামসুল হক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকায় এ বিষয়ে একাধিকবার থানা–পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে গেলে তারা কোনো অভিযোগ, এমনকি জিডি পর্যন্ত নেয়নি। এভাবে গত ১০ বছরে ভুক্তভোগী মেহেদী হাসানের ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাদীর আরও অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর গত ১০ সেপ্টেম্বর ওই সব দোকান ও গুদামের ভাড়া তুলতে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজন মেহেদী হাসানকে আবারও ভয়ভীতি দেখিয়ে ভাড়ার টাকা তুলতে নিষেধ করেন। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর মেহেদী হাসানসহ পাশের জমির মালিকেরা অভিযুক্ত কয়েকজনকে দোকান ও গুদাম থেকে ভাড়া তুলতে নিষেধ করলে তাঁরা উল্টো জমির মালিকদের কাছে আবারও এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে গেলে তারা আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয়।

বাদীর আইনজীবী নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাবনা আমলি আদালত-১–এর বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বেড়া মডেল থানাকে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওলিউর রহমান বলেন, ‘আদালত থেকে এ–সংক্রান্ত কোনো নির্দেশ বা কাগজপত্র আমরা এখনো পাইনি। কাগজপত্র না পাওয়া পর্যন্ত বিষয়টি সম্পর্কে আপাতত বলতে পারছি না।’

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বেড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল হালিম, আলতাফ হোসেন, আবু হানিফ, আশরাফ প্রামাণিক, শাহজাহান আলী, আলহাজ মোল্লা ও আবদুস সাত্তার সরদার। তাঁদের বাড়ি বেড়া পৌরসভার বৃশালিখা মহল্লায়। এ ছাড়া এর বাইরে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের বিষয়ে বাদী মির্জা মেহেদী হাসান বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে ১০ বছর ধরে তাঁরা (শামসুল হক ও তাঁর লোকজন) দখল–বাণিজ্য করে চলেছেন। এ ব্যাপারে বারবার থানায় মামলা বা জিডি করতে গিয়েও বেড়া মডেল থানায় তা দায়ের করতে পারিনি। সরকার পতনের পর ভেবেছিলাম, দখল হওয়া জায়গাজমি উদ্ধার হবে। কিন্তু শামসুল, বাতেন ও আসিফ পলাতক থাকলেও তাঁদের সহযোগীরা এখনো দখল–বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়ে কোনো ফল না পাওয়ায় মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।’

এদিকে ১৪ আগস্ট রাজধানীর পল্টনে এক রিকশাচালক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে শামসুল হক কারাগারে রয়েছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁর ভাই ও ছেলে আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।