ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড কুয়াকাটা সৈকত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত এলাকা ফুঁসে ওঠা জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতটি বঙ্গোপসাগর থেকে ফুঁসে ওঠা জলোচ্ছ্বাসে ডুবে আছে। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জানান, কুয়াকাটা সৈকত এখন পর্যন্ত ৬-৭ ফুট পানির নিচে। বলা যায়, সৈকত এলাকা সাগরের সঙ্গে মিশে গেছে।

মেয়র আনোয়ার আরও বলেন, কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার চলমান উন্নয়নকাজগুলোও দুর্যোগের ভয়াবহতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এককথায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার সমুদ্রসৈকতটি এখন এক বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। দুর্যোগময় এ অবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা কবে নাগাদ ফিরবে, তার সঠিক সময় নিরূপণ করা এখনই সম্ভব নয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া জাতীয় উদ্যান, পর্যটন পার্ক, লেম্বুর চর, শুঁটকিপল্লি এলাকা জোয়ারের চাপে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে সৈকতে নামার রাস্তার পাশে অবস্থিত পর্যটন পুলিশ বক্স, এর পাশের চা-পানের দোকানসহ বেশ কিছু স্থাপনা। সৈকতে নামার প্রধান সড়কটি জোয়ারের চাপে অন্তত ২০ ফুট ভেঙে বিলীন হয়েছে। কুয়াকাটার জাতীয় উদ্যান, পর্যটন পার্ক-সংলগ্ন এলাকার কয়েক শ ঝাউগাছ, নারিকেলগাছ উপড়ে পড়েছে। সৈকতের জোয়ারের পানিতে লাশের মতো গাছগুলো পড়ে আছে।

কুয়াকাটার পশ্চিম খাজুরা গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন জমাদ্দার বলেন, কুয়াকাটা সৈকত প্রতিবছর এমনিতেই ভাঙে। যার ফলে একসময়ের সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রশস্ত সৈকত ভাঙতে ভাঙতে ক্রমশ ছোট হয়ে গেছে। সৈকতটি এখন কোথাও আধা কিলোমিটার আবার কোথাও এর চেয়ে কম প্রশস্ততা নিয়ে টিকে আছে। দুঃখজনক খবর হলো, ঘূর্ণিঝড় রিমাল এবার সৈকতের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা কুয়াকাটার পর্যটনের জন্য বড় রকমের দুঃসংবাদ। এতে আগামী দিনে পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

কুয়াকাটার ইলিশ পার্ক রিসোর্টের মালিক রুমান ইমতিয়াজ বলেন, ‘রিমাল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। এর স্বরূপ হয়তো আমরা শুরু থেকেই বুঝতে পারিনি। কিন্তু এ নিয়ে আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস ছিল, সেসবকে সম্ভবত ভুল প্রমাণ করে ঘূর্ণিঝড়টি তার আসল রূপ প্রমাণ করে দিয়ে গেছে। এতে শুধু কুয়াকাটা পর্যটন নয়, এ উপকূল বিপন্ন হয়েছে।’

এ পর্যটন উদ্যোক্তা আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালে কুয়াকাটার ওয়ারকা পল্লির ১৫০টি ঘরের মধ্যে ২৫টি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। ২৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শামুক-ঝিনুক, শুঁটকি মাছের দোকান, চা-পানের দোকান, খাবার হোটেলসহ অন্যান্য এক শতাধিক স্থাপনার চাল উড়ে গেছে। এতে প্রতিটি দোকানের মালামাল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ এলাকার বাঁধের বাইরে পাশের আরও অন্তত ১০০ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।

এদিকে অতি বর্ষণে কুয়াকাটা পৌরসভার পশ্চিম কুয়াকাটা, মাঝিবাড়ি, তুলাতলী, নবীনপুর, রাখাইন মহিলা মার্কেট এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।