বছরখানেক আগে মাসুম শেখের ওপর বাইসাইকেল তুলে দিয়েছিলেন তানভীর মোল্লা। প্রতিবাদে তানভীর মোল্লাকে চড়-থাপ্পড় মেরেছিলেন মাসুমের বন্ধু হাসিব বয়াতি। সেই থেকে শুরু শত্রুতা। এরপর বিভিন্ন সময় কথা-কাটাকাটি, মারামারিতে জড়িয়েছে দুই পক্ষ।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের বাসিন্দা হাসিব বয়াতি (২৫) গত বুধবার সন্ধ্যায় নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছেন। এক বছর আগের সেই তুচ্ছ ঘটনার জেরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন হাসিবের বাবা ইউনুস বয়াতি। পুলিশও বলছে, পূর্বশত্রুতার জেরে হাসিবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শিয়ালকাঠি গ্রামের মোল্লা বাড়ির সেতু এলাকায় হাসিব বয়াতিকে (২৫) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। নিহত হাসিব বয়াতির শরীরজুড়ে ধারালো অস্ত্রের ২৮টি কোপের চিহ্ন পেয়েছে পুলিশ। গলায়, পেটে ও দুই পায়ে গুরুতর জখম ছিল।
আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসিব বয়াতির সঙ্গে একই গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহারাজ হাওলাদার (৬৫), মোস্তফা মোল্লা (৬০), মোস্তফা মোল্লার ছেলে তানভীর মোল্লার (১৯) সঙ্গে বিরোধ ছিল। মারামারির জের ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। হাসিব হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মহারাজ হাওলাদারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসী বলছেন, হাসিব বয়াতির ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল ছিল। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় মারামারি ও ঝগড়াবিবাদে জড়িত থাকতেন। এক বছর আগে হাসিব বয়াতির বন্ধু মাসুম শেখের ওপর সাইকেল তুলে দেন তানভীর মোল্লা। এ ঘটনার জেরে হাসিব বয়াতি তানভীর মোল্লাকে চড়–থাপ্পড় মারেন। এর পর থেকে হাসিব বয়াতির সঙ্গে তানভীর মোল্লার শত্রুতা তৈরি হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে হাসিব বয়াতির সঙ্গে তানভীর মোল্লা, তাঁর বাবা মোস্তফা মোল্লা ও মহারাজ হাওলাদারের মারামারি ও কথা-কাটাকাটি হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে হাসিবের সঙ্গে প্রতিপক্ষের ঝগড়া হয়েছিল। এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় হাসিবকে স্থানীয় মোল্লা বাড়ির সেতুর কাছে কুপিয়ে ফেলে রাখে প্রতিপক্ষরা।
নিহত হাসিব বয়াতির বাবা ইউনুস বয়াতি বলেন, এক বছর আগে হাসিব বিয়াতি তানভীর মোল্লাকে চড় মেরেছিলেন। এ ঘটনার পর তাঁদের মধ্যে শত্রুতা দেখা দেয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় হাসিব বয়াতি মহিষ নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে তাঁকে কুপিয়ে সড়কের পাশে ফেলে রাখা যায়। মহারাজ হাওলাদার ও মোস্তফা মোল্লার নেতৃত্বে তাঁদের লোকজন হাসিবকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
শিয়ালকাঠি গ্রামের ১২ ব্যক্তির সঙ্গে এই প্রতিবেদক কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন, যাঁদের পরিবারের সদস্যরা হাসিব বয়াতির হামলার শিকার হয়েছেন। তাঁরা বলছেন, হাসিবের নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের তরুণ ও কিশোরদের নিয়ে একটি দল গড়ে ওঠে। গ্রামের মানুষের কাছে ‘কিশোর গ্যাং’ নামে দলটি পরিচিতি পায়। দলের সদস্যরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মারামারিতে জড়িত।
উপজেলার জোলাগাতি গ্রামের রাজিয়া বেগম বলেন, ২০১৫ সালে ক্রিকেট খেলা নিয়ে তাঁর ছেলে ইউসুফ মোল্লার সঙ্গে হাসিব বয়াতির ঝগড়া হয়েছিল। এরপর ইউসুফ পড়াশোনার জন্য ঢাকায় চলে যায়। ২০১৯ সালে ছুটিতে বাড়িতে এলে হাসিব তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ ঘটনায় করা মামলাটি বর্তমানে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে হাসিব বয়াতিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় হাসিব বয়াতির বাবা বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। নিহত হাসিবের বিরুদ্ধে মারামারি ও কুপিয়ে জখমের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।