নাটোরের গুরুদাসপুরে ফসলি জমিতে পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে একজন সাংবাদিক হামলায় আহত হয়েছেন। পুকুর খননের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেন। বুধবার বিকেলে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর জলকপাট এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।
আহত সাংবাদিকের নাম নাজমুল হাসান (২৮)। তিনি দৈনিক সমকালের গুরুদাসপুর উপজেলা প্রতিনিধি। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা আশিফ আরেফিন প্রথম আলোকে মুঠোফোনে জানান, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জরুরি বিভাগে নাজমুল হাসানকে আনা হয়। এক্স-রে করে দেখা গেছে, তাঁর বুকের দুটি হাড় ভেঙে গেছে। এ ছাড়া মাথা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক নাজমুল হাসান বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন নিয়ে ফেসবুক লাইভ করার রেশ ধরে নান্নু মোল্লার (৪৫) নেতৃত্বে তাঁর ছোট ভাই নহর মোল্লা (২০), জুয়েল মোল্লা (২৮), মো. সুমনসহ (৩০) কমপক্ষে ১০ জন হামলা চালিয়েছেন। একপর্যায়ে তাঁরা চাঁচকৈড়-বিলদহর সড়কের ওপর ফেলে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মোহনা টেলিভিশনের সাংবাদিক মিজানুর রহমান, এশিয়ান টিভির তামিম আহম্মেদ ও দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি রাশিদুল ইসলাম বলেন, হাঁড়িভাঙ্গা বিলের সারোয়ার হোসেনের একটি পুকুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছিল। আদালত ভিডিও ধারণ ও ছবি তোলা নিষেধ করায় ফিরে আসেন তাঁরা। পাকা সড়কে ওঠামাত্রই নান্নু মোল্লা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে হামলা চালিয়ে শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাজেম আলী বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে উপজেলাজুড়ে যথেচ্ছভাবে পুকুর খনন চলছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সাংবাদিক নাজমুল হাসানের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে নান্নু মোল্লা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে তিনি বা তাঁর কোনো সহযোগী জড়িত নন। পুকুর খননকারীদের রোষানলের শিকার হয়েছেন তিনি (নাজমুল হাসান)।’
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়ে চলনবিল প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আককাছ ও গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি দিল মোহাম্মদ বলেন, গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে পুকুর খনন মহামারি আকার ধারণ করেছে। কৃষিতে মারাত্মকভাবে এর প্রভাব পড়ছে। গুরুদাসপুর প্রেসক্লাবের সদস্যরা পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। ওই হামলায় জড়িতদের বিচার করতে হবে।