শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি মেরামত করছেন শিল্পীরা। আজ বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ নগরের কাঁচিঝুলি এলাকায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার সামনে
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি মেরামত করছেন শিল্পীরা। আজ বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ নগরের কাঁচিঝুলি এলাকায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার সামনে

ময়মনসিংহে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য মেরামত

ময়মনসিংহে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্য মেরামত করা হয়েছে। স্থানীয় চারুশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার নগরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার সামনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই শিল্পীর ভাস্কর্যটি মেরামত করা হয়।

নগরের কাঁচিঝুলি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালার সামনে জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি ২০১৫ সালে নির্মাণ করে তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভা। ভাস্কর্যটির এক পাশে সংগ্রহশালা, অন্য পাশে উদ্যান। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শোনার পর ময়মনসিংহ নগরে আনন্দমিছিল বের হয়। ওই দিন সন্ধ্যার আগমুহূর্তে একদল লোক অটোরিকশা দিয়ে এসে ভাস্কর্যটি ভাঙতে শুরু করে। তখন আনন্দমিছিল থেকে ছড়িয়ে থাকা অনেক শিক্ষার্থীও এলাকাটিতে ছিল। সংগ্রহশালার কর্মী ও উপস্থিত কিছু শিক্ষার্থী বিক্ষুব্ধ লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, জয়নুল আবেদিন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। এরপর ভাঙচুর বন্ধ করে তারা চলে যায়। ভাস্কর্যটির নাক ও ঠোটের কিছু অংশ ভেঙে যায়।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্প পর্ষদের সভাপতি মো. রাজন বলেন, ‘আজ দুপুরে ভাস্কর্য মেরামতের কাজ শুরু হয়; শেষ হয় বিকেল চারটায়। ভাস্কর্যটি সাদা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। আমাদের শিল্পীরা সাদা সিমেন্ট দিয়েই মেরামত করেছেন। শিল্পাচার্যের ভাস্কর্যের সম্মানহানি আমাদের শিল্পীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের মতো হচ্ছিল। এই জায়গা থেকে আমরা এটিকে ব্যান্ডেজ বা চিকিৎসা করলাম।’

মো. রাজন আরও বলেন, ‘ভাস্কর্যটি সাময়িকভাবে মেরামত করা হয়েছে। এটি অপসারণ করে সেখানে পেশাদার ভাস্কর দিয়ে শিল্পগুণসমৃদ্ধ একটি ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেব।’

ভাস্কর্যটি সাময়িকভাবে মেরামত করা হয়েছে। এটি অপসারণ করে সেখানে পেশাদার ভাস্কর দিয়ে শিল্পগুণসমৃদ্ধ একটি ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেব।
মো. রাজন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্প পর্ষদের সভাপতি

ভাস্কর্য মেরামতের মূল কাজটি করেন চারুশিল্পী হোসাইন ফারুক ও মো. রাজন। এ সময় সেখানে ছিলেন চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক, জয়ন্ত কুমার তালুকদার (শিবু), হাসান মাসুদ, গৌতম কুমার দেবনাথ ও বিশ্বজিৎ কর্মকার (তপু), মহানগর সুজনের সম্পাদক আলী ইউসুফ, এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়ামের পরিচালক রেজাউল করিম আসলাম প্রমুখ।

হোসাইন ফারুক বলেন, ‘যারা এটা (ভাস্কর্য) ভেঙেছে, তাদের আসলে দুষ্কৃতকারী বলব না। তারা হয়তো না বুঝেই করে ফেলেছে। এ রকম সংখ্যায় খুবই অল্প হাতে গোনা মানুষ আছে। সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, যারা ভাস্কর্য ভাঙতে আসবে, তাদের বোঝাতে হবে।  বাঙালি সংস্কৃতির আঘাত আসে, এ রকম কোনো কর্মকাণ্ড যেন কেউ না করেন।’

জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিভাবান এই শিল্পীকে ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের পথিকৃৎ বলে ধরে নেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ।

১৯৭৫ সালে জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ে একটি লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে একটি গ্যালারি (শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা) প্রতিষ্ঠা করেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে তাঁর অঙ্কিত কিছু চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।