রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মাহির পক্ষে মামলা করেন তাঁর ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম।
এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ভাগাইল গ্রামে ওই নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
মামলায় আসামি করা হয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলার বিয়ানাবোনা গ্রামের মো. বেলাল উদ্দিন, একই গ্রামের মো. রিজওয়ান, ভাগাইল গ্রামের মো. রতন আলী, চক চাপাল গ্রামের মো. সালমান ফিরোজ ওরফে ফয়সাল, ছয়ঘাটি গ্রামের মো. মামুনুর রশিদ ওরফে বাবু। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও চার–পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী জাহিদুল ইসলাম বলেন, দেওপাড়া ইউনিয়নের ভাগাইল গ্রামে মাহির নির্বাচনী কার্যালয় চালুর শুরু থেকে এই ব্যক্তিরা হুমকি দিয়ে আসছিলেন, তাঁরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন। তাঁদের কাছে মনে হয়েছে, এ ব্যক্তিরাই নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন। এখন পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, নির্বাচনী কার্যালয় পোড়ানো ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। যাঁদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এর আগে মাহি তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা নিজে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রথমে জানান। পরে গতকাল দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এই বিষয়গুলো নিয়ে।
মাহি বলেন, ‘আগের রাতে (শুক্রবার) তারা আমার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি প্রশাসনকে অবহিত করেছি। ওই ঘটনার রেশ ধরেই আমার অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়ার পরই এলাকার লোকজন এসে আগুন নিভিয়েছেন। নয়তো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত। পাশের বাড়িতেও আগুন লাগতে পারত। যদিও অফিসের কিছু ক্ষতি হয়েছে।’
মাহি আরও বলেন, এটা কিন্তু একটা ধৃষ্টতা। এখান থেকেই কিন্তু আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে যেন সবাই তৎপর হন। ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়। ব্যবস্থা না নিলে এই রকম ঘটনা আরও বড় পরিসরে ঘটবে।
এর আগে গত শুক্রবার রাত নয়টার দিকে গোদাগাড়ীর পালপাড়া এলাকায় প্রচারণায় গিয়ে বাধার মুখ পড়ার কথা জানিয়েছিলেন মাহি। এর দুই দিন আগে আরেক স্থানে যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীর তোপের মুখে পড়তে হয় মাহিকে। এসব কারণে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে থাকার কথা জানিয়েছেন মাহি। তাঁর অভিযোগ, ভোটের মাঠে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হেনস্তার চেষ্টা করছেন নৌকার সমর্থকেরা।
আগের দুই ঘটনায় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বক্তব্য পাঠিয়ে মাহি শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে, আমি যেখানে যাব, সেখানে সাধারণ জনগণ সেজেই তাঁরা একটা বিশৃঙ্খলা করবে। আমি ভীতসন্ত্রস্ত। কারণ, আর মাত্র কয়েকটা দিন আছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে কে কখন ঢুকে যাবে এবং বিশৃঙ্খলা করবে। তাই আমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই, তারা যেন এদিকে খেয়াল রাখে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহিয়া মাহি। না পেয়ে রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী আবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। ওমর ফারুক চৌধুরী ও মাহিয়া মাহি ছাড়াও আরও নয়জন প্রার্থী রয়েছেন এ আসনে।