টাঙ্গাইলের নাগরপুর

ভাঙনে যমুনায় বিলীন চার বিদ্যালয়

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে ভাড়া করা জায়গায় অস্থায়ীভাবে চলছে পাঠদান।

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে যমুনার ভাঙনে এ বছর বিলীন হয়েছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েক শ ঘরবাড়ি। সম্প্রতি উপজেলার সলিমাবাদে
প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় দুই বছরে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও একটি বিদ্যালয় রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে ভাড়া করা জায়গায় অস্থায়ীভাবে চলছে পাঠদান। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়টি আধা কিলোমিটার দূরে মসজিদের জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে অস্থায়ী ছাপরা তুলে ১ জুলাই থেকে চলছে পাঠদান। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ জানান, শিক্ষার্থীদের পাঠদান যাতে ব্যাঘাত না হয়, সে জন্য অস্থায়ীভাবে ঘর তুলে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। 

এর আগে গত জুন মাসে নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। পরে স্কুল আধা কিলোমিটার দূরে জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মতিন জানান, এই স্কুলে ৩৩৫ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। নদীতে ৫২ শতাংশ জায়গাসহ স্কুলের স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। এখন বছরে ৯ হাজার টাকায় ১২ শতাংশ জমি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে শিক্ষকদের উদ্যোগে একটি টিনের ঘর তোলা হয়েছে। আর তাতেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। 

উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর বাজুয়ারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিশ্চিন্তপুর নতুনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। 

নিশ্চিন্তপুর নতুনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, স্কুলটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর দুই কিলোমিটার দূরে স্থানান্তর করা হয়। বছরে ১০ হাজার টাকায় ১০ শতাংশ জমি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। নিজেরাই ছাপরা তুলে সেখানে পাঠদান চালাচ্ছেন। বিদ্যালয় স্থানান্তর করার পর শিক্ষার্থী কমে গেছে। ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষের বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন। তাই শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এখন তিনজন শিক্ষক স্কুলে কর্মরত। 

একই অবস্থা বাজুয়ারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। গত বছর নদীতে স্কুলটি বিলীন হওয়ার পর আধা কিলোমিটার দূরে ১০ শতাংশ জায়গা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি টিনের ঘর চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। স্কুল স্থানান্তরের জন্য কোনো আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়নি। স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয় বলে প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান।

এ ছাড়া উপজেলার ধুবরিয়া ইউনিয়নের বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যমুনা নদী ভাঙতে ভাঙতে স্কুলের কাছে চলে এসেছে। যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে—এ আশঙ্কায় স্কুলের সব আসবাব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো নিরাপদ এলাকায় বিভিন্ন জনের বাড়িতে রাখা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার বিশ্বাস জানান, এখন মাদুর পেতে সেখানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়। 

সরকরি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা বলেন, নদীতে ভেঙে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিরাপদ স্থানে দ্রুত পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন। না হলে এসব স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হবে। সেই সঙ্গে অনেক শিশু ঝরে পড়বে স্কুল থেকে। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি ভাঙনকবলিত স্কুলগুলো পরিদর্শন করেছেন। পাঠদান যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য অস্থায়ী জায়গায় স্কুলের কার্যক্রম চলছে। নিরাপদ এলাকায় জায়গা খুঁজে সেখানে স্কুলগুলো পুনরায় স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।