ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির দোয়া মাহফিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর পড়ে থাকা ব্যানার। উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দি এলাকায়
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির দোয়া মাহফিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর পড়ে থাকা ব্যানার। উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দি এলাকায়

বাঞ্ছারামপুরে দোয়া মাহফিল আয়োজন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় আবু সাঈদসহ সব শহীদ ছাত্রের স্মরণে এবং খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ও উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী, বিএনপির কর্মী ফারুক আহমেদ, মো. আলাউদ্দিন, সোহেল মিয়া, বাবুল মিয়ার নাম জানা গেছে। তাঁরা বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব ও কমিটি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। একটি পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়া আবদুল খালেক। তিনি পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। আরেকটি পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (পলাশ)। উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের নেতৃত্বে দুই ভাগে বিভক্ত।

উপজেলা বিএনপি, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দিতে দোয়া মাহফিল আয়োজন করে ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়ন বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠন। এতে আবু সাঈদসহ সব শহীদ ছাত্রের স্মরণে এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির কামনা করা হয়। অনুষ্ঠানে আবদুল খালেকের অনুসারী ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য হযরত আলীসহ ইউনিয়ন বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে যোগ দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য রফিক সিকদার ও অন্য নেতা-কর্মীরা। মেহেদী হাসানের পক্ষের উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ফরিদ ও তাঁর লোকজন সেখানে পৌঁছে দোয়া মাহফিলে বাধা দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৮-১০ জন আহত হন। বিএনপির আহত নেতা-কর্মীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের অনুষ্ঠান চলছিল। একপর্যায়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ফরিদ তার ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের নেতা রাজীব আহমেদসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এনে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। এতে আমি, উপজেলা বিএনপির কর্মী সোহেল আহমেদসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কেন এই আয়োজন করেছি, সে জন্যই তারা হামলা চালিয়েছে। এখন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আবু সাঈদের ব্যানার রক্ষা করা কি আমার পাপ, নাকি অন্যায়। তারা আবু সাঈদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ধাওয়া করে তাদের ওপর হামলা করে।’

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ফরিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে হাতাহাতির এক পর্যায়ে আমাদের ওপর হামলা হয়। আমরা কিছুই করতে পারিনি। আমি আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা হামলা করেছে, তারা আওয়ামী লীগের লোকজন। এখন তারা নিজেদের নামধারী বিএনপির নেতা পরিচয় দেয়।’

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে একটু ঝামেলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কেউই কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।