মায়ের দাবি তাঁর দেড় বছরের ছেলে পানিতে ডুবে মারা গেছে। তবে শিশুটির দাদার সন্দেহ মাকে ঘিরে। অভিযোগ তোলা হয়, শিশুটিকে হত্যার পর পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
শিশুটির নাম মাহীদুল ইসলাম। ময়নাতদন্তের পর আজ শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের টিঘর গ্রামে লাশ দাফন করা হয়েছে। এর আগে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হয়।
গতকাল শুক্রবার রাতে পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের টিঘর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে বশির আহাম্মদের সঙ্গে ২০১৯ সালে একই ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামের নূর মিয়ার মেয়ে শিউলি আক্তারের বিয়ে হয়। মাহীদুল ইসলাম ছিল বশির-শিউলির সন্তান। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই বশির-শিউলির মধ্যে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। দুই বছর আগে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদও ঘটে। কয়েক মাস পর উভয়ের সম্মতিতে আবার সংসার শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু কলহ থেকেই যায়।
পুলিশ জানায়, স্বামী-স্ত্রীর কলহের জেরে সাত মাস আগে শিউলি আক্তার ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান। তিন মাস আগে বশির আহম্মেদ পরিবারের কাউকে কিছু না বলে লাপাত্তা হন। আড়াই মাস আগে বশিরের বাবা থানায় নিখোঁজের ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
গতকাল বিকেল চারটার দিকে মাহীদুল নিখোঁজ হয়। ঘণ্টাখানেক পর পরিবারের লোকজন নূর মিয়ার বসতবাড়ির পাশের পুকুর থেকে মাহীদুলের লাশ উদ্ধার করে। শিউলি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দাবি, মাহীদুল পানিতে ডুবে মারা গেছে। কিন্তু শিশুটির দাদা মোহাম্মদ আলী শিউলি আক্তারের দাবি না মেনে পুলিশের কাছে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য লাশের ময়নাতদন্তের দাবি করেন।
পুলিশ গতকাল রাতে নূর মিয়ার বাড়ি থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে নেয়। সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেটি পানিতে ডুবে মারা গেছে। তিন মাস ধরে স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। মাঝেমধ্যে সে ফোন দিয়ে শুধু ছেলের সঙ্গে কথা বলত। বিয়ের পর থেকে স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন আমারে মারধর করত। বাধ্য হইয়া আমি সাত মাস আগে চইল্লা আইছি।’
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শিউলি আক্তারের সঙ্গে অন্য ছেলের সম্পর্ক আছে। এই জন্য আমার নাতিরে ইচ্ছা কইরা মাইরা পানিতে ফালাইয়া দিছে। আমি থানায় অভিযোগ দিছি। আমি এর বিচার চাই।’
মাহীদুলের লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী সরাইল থানার উপপরিদর্শক পঙ্কজ দাশ বলেন, লাশের গায়ে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শিশুর দাদার অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, পানিতে ডুবেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিশুটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।