জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ২৪ শিক্ষক ক্যাম্পাসে বর্তমান উপাচার্য নুরুল আলমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ প্যানেল থেকে জয় পেয়েছেন। গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে এ ফল প্রকাশ করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু হাসান।
এবারের সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে একটি প্যানেলে অংশ নেন। তাঁরা বর্তমান উপাচার্য নুরুল আলমের সমর্থক। এই প্যানেল থেকে ৩৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৪ জন জয় পেয়েছেন। অন্যদিকে, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের আরেকটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান উপাচার্যের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাঁদের সঙ্গে বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা জোট করে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি প্যানেল দেন। এই প্যানেল থেকে ৩৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮টি পদে জয় পেয়েছেন। আর স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দুজন। তাঁদের মধ্যে একজন জয় পেয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিক্ষকেরা হলেন ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) অধ্যাপক এম শামীম কায়সার (৩৮৪ ভোট), নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন (৩৪৫), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) অধ্যাপক মোহাম্মদ বখতিয়ার রানা (৩৩৯), প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা (৩১৭), লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান (৩০৫), গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ (২৯৮), পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান (২৯০), রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা (২৮৯), পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক (২৮২), ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ রেজা (২৭৩), নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম ইউসুফ হাসান (২৭১), নগর ও অঞ্চল–পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিক-উর-রহমান (২৭১), বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার (২৬৫), পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন (২৬২), রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক সাহা (২৬১), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মো. খালিদ কুদ্দুস (২৫৮), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান (২৫৭), ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজা খাতুন (২৫৬), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক যুগল কৃষ্ণ দাস (২৫৪), ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহেদুর রশিদ (২৪৭), ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা (২৪৭), মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ (২৪৬), সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন (২৩৮) ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু (২৩৮)।
এ ছাড়া শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিক্ষকেরা হলেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মো. সোহেল রানা (৩৩২), অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম (৩০৫), প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন (২৯৬), ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন (২৮৭), প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন (২৮৩), পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দীন (২৫২), ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব (২৪৭) এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক আবেদা সুলতানা (২৪৩)। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী (২৫৯) বিজয়ী হয়েছেন।
এর আগে গতকাল সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে উৎসবমুখর পরিবেশে এ নির্বাচন শুরু হয়ে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। নির্বাচনে ৬১৩ জন ভোটারের মধ্যে ৫৭৭ জন ভোট দেন। ৩৩টি আসনের বিপরীতে ৬৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
ফল প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ প্যানেলের পক্ষে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলম কবীর বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমরা যেসব ইশতেহার প্রকাশ করেছিলাম, সেগুলো বাস্তবায়ন করব। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে আমরা তৎপর থাকব।’ অন্যদিকে, শিক্ষক ঐক্য পরিষদ প্যানেলের পক্ষে অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দলমত-নির্বিশেষে আমরা একত্রে কাজ করব।’
সর্বশেষ ২০১৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিন বছর পর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আট বছর পর গতকাল এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।