ছেলে সুশীল চন্দ্র সরকারের (৬৫) মৃত্যুর খবর পাওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর তাঁর অসুস্থ মা শেফালী রানী সরকারও মারা গেছেন। আজ সোমবার সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কামলাবাজ উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। একই দিনে পরিবারে দুজন সদস্য মারা যাওয়ার ঘটনায় মাতম করছেন স্বজনেরা।
এলাকার লোকজন বলেন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের কামলাবাজ উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত কার্তিক চন্দ্র সরকারের ছেলে সুশীল চন্দ্র সরকার (৬৫)। তিনি জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ধর্মপাশা উপজেলা শাখার সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদ্রোগে ভুগছিলেন। শেফালী রানী সরকার (৭৫) তাঁর সৎ মা। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শেফালী কথাবার্তা বলতে বা চলাফেরা করতে পারতেন না। তবে কানে শুনতেন। ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলতেন। সুশীল সরকার তাঁর মাকে খুবই ভালোবাসতেন।
পরিবারের লোকজন বলেন, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সুশীল চন্দ্র সরকার শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করলে রাতেই তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। আজ দুপুর ১২টার দিকে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে শেফালী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিকেল চারটার দিকে সুশীলের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এর কিছুক্ষণ পর বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে শেফালীও মারা যান।
আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কামলাবাজ উত্তরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, একই দিনে মা ও ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে আশপাশের গ্রাম থেকে অনেক মানুষ ভিড় করেছেন। পরিবারের সদস্যদের তাঁরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সুশীল সরকারের ভাতিজি স্বপ্না রানী সরকার বলেন, কাকার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই দিদিমার অস্থিরতা বেড়ে যায়। কাকার মৃত্যুর শোক সইতে না পেরেই তিনি মারা গেছেন।
গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ সরকার (৪৫) বলেন, একই দিন মা ও ছেলের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। এ ঘটনায় পুরো গ্রামবাসী বাক্রুদ্ধ। ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবায়ের পাশা বলেন, সুশীল চন্দ্র সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা ছিলেন। একই দিনে ছেলে ও মায়ের মৃত্যুর খবরটি খুবই বেদনাদায়ক।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ধর্মপাশা উপজেলা শাখার সদস্যসচিব সংস্কৃতিকর্মী চয়ন কান্তি দাস বলেন, ‘একই দিনে মা ও ছেলের মৃত্যুকে আমরা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারছি না। আজ রাত ৯টার দিকে উপজেলার কামলাবাজ উত্তরপাড়া গ্রামের পারিবারিক শ্মশানে মা ও ছেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’