কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত চিকিৎসক কুরবান আলীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। আজ বিকেল চারটায় চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ এলাকায়
কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত চিকিৎসক কুরবান আলীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। আজ বিকেল চারটায় চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ এলাকায়

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কিশোর গ্যাং নেতা গ্রেপ্তার না হলে আন্দোলন

‘আজ এলাকাবাসীসহ সবাই বলছে টর্চার সেলের কথা। এটি প্রকাশ্য সত্য। শুধু আমি নই, পুরো এলাকাবাসী ভুক্তভোগী। তাঁরা বিভিন্নভাবে এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি দেখাত। তাই কেউ কিছু বলেনি। আমি এখন এতিম। সবাই ভয়ে আছে, যদি আবার আমাদের ওপর কোনো হামলা হয়। এ অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি, অপরাধীদের যাতে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হয়।’

আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানান কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত চিকিৎসক কুরবান আলীর ছেলে আলী রেজা। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে বিকেল চারটার দিকে শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন এ মানববন্ধনে।

এ সময় বক্তব্য দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা এরশাদ মামুন। তিনি বলেন, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কিশোর গ্যাং নেতা ও গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা না হলে পুলিশ কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এরপরও যদি আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এলাকাবাসী আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

উপস্থিত অন্য বক্তারা বলেন, ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। এতে আসামিরা সুযোগ পাচ্ছেন। এ ঘটনায় কিশোর গ্যাং নেতা গোলাম রসুল নিশান এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। পাশাপাশি তাঁরা ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে না দাঁড়ানোর জন্য এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। এমন অবস্থায় পুলিশের অসহযোগিতা আসামিদের আরও প্রশ্রয় দেবে।

৫ এপ্রিল নগরের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ আবাসিক এলাকায় দন্তচিকিৎসক কুরবান আলীকে পিটিয়ে আহত করা হয়। তাঁর মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলে আলী রেজাকে বাঁচাতে এসে তিনি হামলার শিকার হন। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন ভবন থেকে ১৫–২০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১০ এপ্রিল চিকিৎসক কুরবান আলী মারা যান। এ ঘটনায় আলী রেজা বাদী হয়ে কিশোর গ্যাং নেতা গোলাম রসুলসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আকবর শাহ থানায় হত্যা মামলা করেন।

জানা যায়, পশ্চিম ফিরোজ শাহ এলাকায় রাস্তার পাশে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন ভবনটি স্থানীয়ভাবে ‘নিশান গ্রুপের (গোলাম রসুল) টর্চার সেল’ নামে পরিচিত। গোলাম রসুলের কিশোর গ্যাংয়ের নাম ‘নিশান গ্রুপ’। এই ভবনের পাশেই পিটিয়ে খুন করা হয় দন্তচিকিৎসক কুরবান আলীকে।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় লোকজন জানান, স্থানীয় বাসিন্দা মো. সামির, মো. রিয়াদ, সোহেল ওরফে বগা সোহেল, মো. আকিব, মো. অপূর্ব,  মো. রাজু, মো. সাগর, মো. বাবু, মো. রাজু, মো. সংগ্রাম, মো. সাফায়েত ও মো. আকবর এই টর্চার সেলে গোলাম রসুলের নির্দেশে নির্যাতন করতেন। তাঁদের সবাইকে দন্তচিকিৎসক কুরবান আলী হত্যা মামলায়ও আসামি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) নিহাদ আদনান তাইয়ান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।