অবরোধে আটকা পড়া একটি আন্তনগর ট্রেন। আজ দুপুরে চট্টগ্রামের বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে
অবরোধে আটকা পড়া একটি আন্তনগর ট্রেন। আজ দুপুরে চট্টগ্রামের বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে

বিক্ষোভে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে যানজট, রেলযাত্রীদের ভোগান্তি

ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকা থেকে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন আল আমিন হোসেন। তবে লালখান বাজার এলাকা পার হতে গিয়েই পড়েন বিপাকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে হেঁটে পার হন পুরো রাস্তা। চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষার্থীদের কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের কারণে আল আমিনের মতো আরও কয়েক শ যাত্রীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

আল আমিন বলেন, জিইসি থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ওয়াসা এলাকা পর্যন্ত আসা গেছে। এর পর থেকে যানজট। পুরো রাস্তা বন্ধ। লালখান বাজার এলাকায় দেড় ঘণ্টা বসে থাকার পর হেঁটে দেওয়ানহাটে আসতে হয়েছে।

রেল অবরোধের কারণে ছাড়েনি ট্রেন। এ জন্য স্টেশনে আটকা পড়েন অনেক যাত্রী। আজ দুপুরে চট্টগ্রামের বটতলী রেলওয়ে স্টেশনে

চট্টগ্রামে আজ সকাল থেকে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের রেল ও সড়ক অবরোধ চলছে। দেওয়ানহাট এলাকায় রেলপথ ও নগরের প্রধান সড়ক টাইগারপাস মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ বেলা ১১টা ২৫ মিনিট থেকে রেলপথে অবরোধ শুরু করেন। পরে বেলা একটার দিকে তাঁরা নগরের টাইগারপাস মোড়ে অবস্থান নেন।

এ সময় টাইগারপাসমুখী সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। অধিকাংশ যাত্রীকে লালখান বাজার ও ওয়াসা হয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করতে দেখা গেছে। টাইগারপাস থেকে ঝাউতলা, নিউমার্কেট, লালখান বাজার ও দেওয়ানহাটমুখী পুরো সড়ক অচল হয়ে পড়ে। যানজটে আটকে পড়ে কয়েক শ যানবাহন।

সরেজমিন দেখা যায়, বেলা একটার দিকে আন্দোলনরতদের একটি অংশ রেললাইন ছেড়ে টাইগারপাস মোড়ের দিকে রওনা হয়৷ পরে তারা সেখানে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ এখনো রেললাইনে রয়েছে।

টাইগারপাস সোড়ে অবরোধকারী ষিক্ষার্থীদের পেছনেই যানবাহনের লম্বা সারি। দুপুর একটার পর শিক্ষার্থীরা এই সড়কে অবরোধ শুরু করলে যানজটে অচল হয়ে পড়ে নগরী

বন্ধ রেল যোগাযোগ

এদিকে শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, কক্সবাজারের ট্রেন আটকা পড়ে। এতে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন জেলায় যাওয়া যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। স্টেশনে আটকা পড়েন কয়েক শ যাত্রী।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশনে আটকে ছিল। এটি ছাড়াও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেনটি পাহাড়তলী স্টেশনে আটকা পড়েছে।

যানজটে আটকে পড়া এক কিশোরী যাত্রী বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আজ দুপুরে টাইগারপাস এলাকায়

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী শফিক রহমানের সঙ্গে। দুপুর সাড়ে ১২টার ট্রেনে তাঁর ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার কথা। তবে ট্রেন না ছাড়ায় বিপাকে পড়েছে তিনি। শফিক রহমানের মতো আরও কয়েক শ যাত্রীকে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন আবদুল হালিম। ১১টা থেকে বসে আছে পাহাড়তলী রেলস্টেশনে। এখনো পৌঁছাতে পারেননি চট্টগ্রাম স্টেশন।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কারণে অন্তত পাঁচটি ট্রেন আটকা পড়েছে। ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস, কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেসের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। মহানগর গোধূলী এক্সপ্রেসের শিডিউলও পিছিয়ে গেছে এ কারণে।