সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট ব্রিজ হয়ে সিলেট নগরের কিনব্রিজ পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন বরগুনার মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে রাসেল। এই প্রথম এত দীর্ঘ পথের সাঁতারে অংশ নিয়েছেন তিনি। তবে বাংলা চ্যানেল এক দিনে দুবার পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড আছে তাঁর। সাঁতার-প্রীতি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।
কবে সাঁতার শিখেছেন?
সাইফুল ইসলাম: আমি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি, তখন বাবা ও ভাইদের কাছ থেকে সাঁতার শিখেছি। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট আমি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নয়, গ্রামের ছেলে হিসেবে অন্য সবার মতোই আমার সাঁতার শেখা হয়েছে। আমার বাড়ি বরগুনা সদরের দক্ষিণ খেজুরতলায়, বাড়ির পাশের বিশখালী নদীর শাখা খাকদন নদে সাঁতার শিখেছি।
পড়াশোনা কোথায় করেছেন, এখন কী করছেন?
সাইফুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে শিক্ষকতা করছি। রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। এর মধ্যে সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (জিপিএড) ডিগ্রি অর্জন করেছি।
সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আগ্রহ কবে থেকে হলো?
সাইফুল ইসলাম: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০০২ সালে প্রথম সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। সেটা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা ছিল। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আরও সুযোগ আসে। ২০১৫ সালে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। ২০১৭ সালে সাঁতারের জাতীয় ক্যাম্পে প্রশিক্ষণও নিয়েছি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং দল ও ওয়াটার পলো দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। সাঁতার না জানার কারণে অনেকে পানিতে ডুবে মারা যান। মানুষকে সাঁতারে আগ্রহী করতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিই, সচেতন করার চেষ্টা করি।
দূরপাল্লার সাঁতারে কবে থেকে অংশ নিচ্ছেন?
সাইফুল ইসলাম: ২০১৮ সালের পর থেকে দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নিতে শুরু করি। এর আগে ‘শর্ট ডিসটেন্স’ সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম।
সিলেটের সুরমা নদীতে ৬৫ কিলোমিটার সাঁতারে নেমে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন?
সাইফুল ইসলাম: এই প্রথম এত দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নিয়েছি। এর আগে ৪৬ কিলোমিটার পথ সাঁতার কেটেছি। সিলেটের সুরমা নদীর পানি এখন অত্যন্ত ঘোলা। নদীর পথগুলো অনেক আঁকাবাঁকা ছিল। প্রথমে নদীতে স্রোতে ভেসে সাঁতারের পরিকল্পনা থাকলেও স্রোত কম থাকায় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এ ছাড়া নদীর পানিতে স্থানে স্থানে অনেক ‘ঘূর্ণি পাক’ ছিল, তখন সাঁতার কাটতে কষ্ট হয়েছে। সকালে সাঁতার শুরু করে শেষ করতে করতে রাত হয়ে গিয়েছিল। শেষ সময়ে এসে প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টি, বাতাস ও ঢেউয়ের কারণে সাঁতার কাটতে কষ্ট করতে হয়েছে। এই সাঁতারটি আমার জীবনের দীর্ঘতম এবং দীর্ঘ সময় ধরে সাঁতার। ৬৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ১১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট।
আর কোথায় সাঁতার কেটেছেন?
সাইফুল ইসলাম: কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে বঙ্গোপসাগরের বাংলা চ্যানেলে ছয়বার সাঁতারে অংশ নিয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রথম বাংলা চ্যানেলে সাঁতারে অংশ নিয়েছিলাম। এর মধ্যে এক আয়োজনে দুবার পাড়ি দিয়েছি। বাংলা চ্যানেল দুবার পাড়ির পথ ছিল ৩২ দশমিক ২ কিলোমিটার। সাঁতার কাটতে সময় লেগেছিল ১০ ঘণ্টা ২০ মিনিট। এ ছাড়া একবার পাড়ি দিতে আমার শ্রেষ্ঠ টাইমিং ছিল ৩ ঘণ্টা ৮ মিনিট। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে ছয়বার অংশ নিয়ে চারবার চ্যাম্পিয়ন, একবার রানারআপ ও একবার তৃতীয় স্থান অর্জন করেছি। এ ছাড়া চলতি বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত ‘ওশেনম্যান এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ’ নামে ১০ কিলোমিটার সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চতুর্থ হয়েছিলাম। চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার কথা আছে।
সাঁতার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
সাইফুল ইসলাম: ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেটি হয়ে উঠছে না। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো প্রয়োজন। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও কোনো ‘রেসপন্স’ পাওয়া যায়নি। সাঁতার না জানায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু কমিয়ে আনার জন্য সাঁতার শেখার গুরুত্ব প্রচারণা করছি। এটিকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হয়তো সম্ভব নয়, তবে কমিয়ে আনা সম্ভব।