কুয়াকাটায় সাগরে পূজা করে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাসমেলা। আজ শনিবার সকালে
কুয়াকাটায় সাগরে পূজা করে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাসমেলা। আজ শনিবার সকালে

কুয়াকাটায় সাগরে পুণ্যস্নানে শেষ হলো রাসমেলা

পূর্ব আকাশে সূর্য লাল আভা ছড়িয়ে কেবল উঁকি দিচ্ছে, এমন সময় হাজার হাজার হিন্দু নর-নারীর উলুধ্বনিতে মুখর কুয়াকাটার প্রায় তিন কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত এলাকা। অনেকে ব্যস্ত পূজা করতে, অনেকে পূজা শেষ করে পুণ্যস্নানের জন্য সাগরের লোনাজলে নেমে পড়েছেন। সৈকতজুড়েই ভক্তদের পদচারণ। আজ শনিবার সকালে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো রাসমেলা।

কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন ও কুয়াকাটা পৌরসভার যৌথ আয়োজনের এবারের রাসমেলা গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্বোধন করেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। রাসমেলা উপলক্ষে কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রের ডিসি পার্কে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় ঢাকা, বরিশাল, কলাপাড়া ও কুয়াকাটার শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

হিন্দু পুণ্যার্থীরা কুয়াকাটার ‘রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম’ প্রাঙ্গণে রাতভর নামকীর্তন উপভোগ করেন এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার পালন করেন। এর মধ্যে ছিল রাতভর নামকীর্তন, গীতা পাঠ ও আরতি। শ্রীকৃষ্ণের লীলা কীর্তনে এবার ভারতের কবিতা ঘোষ তাঁর দল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। তা ছাড়া রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের পক্ষ থেকে আগত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।

খুলনার ফুলতলা এলাকার জয়শ্রী সরকার বলেন, সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করার আশায় তাঁরা পুরো রাত জেগে ধর্মীয় সব নিয়ম পালন করেছেন।

পুণ্যস্নানের আগে পূজা করছেন ভক্তরা

কুয়াকাটা রাসমেলা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি কাজল বরণ দাস বলেন, ইতিমধ্যে হিন্দুভক্তরা পুণ্যস্নান শেষ করে রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি দর্শন করে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।

সত্য ও সুন্দরের জয়ের আকাঙ্ক্ষায় প্রায় ২০০ বছর ধরে কুয়াকাটা ও কলাপাড়ায় রাস উৎসব উদ্‌যাপন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

কুয়াকাটার রাসমেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় হাজারখানেক ভাসমান দোকানি রংবেরঙের সামগ্রীর পসরা বসিয়েছিলেন। তা ছাড়া কুয়াকাটার রাখাইন মহিলা মার্কেট, জিরোপয়েন্ট–সংলগ্ন এলাকার শামুক-ঝিনুকের দোকানেও বিভিন্ন রকমের পণ্যের সম্ভার ছিল। মেলা উপলক্ষে বেচা-বিক্রি ভালো হয়েছে বলে জানালেন ঝিনুক ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত তিন দিনে আমার এক লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে।’

সজল চন্দ্র বিশ্বাস নামের একজন পুণ্যার্থী বলেন, ‘জাগতিক জীবনে চলতে গিয়ে অনেক পাপ হয়ে থাকে। সাগরের লোনাজলে পুণ্যস্নান করে পাপমোচনের চেষ্টা করেছি।’