কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্টে গোসল করতে নেমে মারুফ আহমেদ (২০) নামের এক কলেজশিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছেন। আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত মারুফের সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় মো. শাওন হোসেন (২০) নামের মারুফের এক বন্ধুকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মারুফ আহমেদ গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী। শাওন গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকা হারুন মিয়ার ছেলে এবং একই কলেজের শিক্ষার্থী।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র উত্তাল থাকায় গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হয়েছে। এরপরও বেলা দুইটার দিকে ভাটা চলার সময় গাজীপুরের তিন শিক্ষার্থী মারুফ, মাসুম ও শাওন সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে গোসলে নামেন। তিনজন গলাসমান পানিতে নেমে ঢেউয়ের সঙ্গে খেলছিল। মুহূর্তে একটি ঢেউয়ের ধাক্কায় মারুফ ও শাওন গভীর সাগরের দিকে ভেসে যেতে থাকেন। মাসুম কোনোমতে উঠে এসে চিৎকার করতে থাকেন এবং মারুফ ও শাওনকে উদ্ধারে লাইফগার্ডের সহযোগিতা চান। এরপর ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় লাইফগার্ডের সদস্যরা সাগরে শাওনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেন। তবে মারুফ এখনো নিখোঁজ।
সাগর থেকে উঠে আসা মো. মাসুম গাজীপুরের ফুলবাড়ী এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। মাসুম বলেন, রোববার রাতে তাঁরা তিন বন্ধু গাজীপুর থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে এসে কলাতলীর অ্যাম্বাসেডর হোটেলে ওঠেন। দুপুরে তিনজন সৈকতে গোসল নামেন। ঢেউয়ের ধাক্কায় দুইজন ভেসে গেলেও তিনি সাঁতার কেটে উঠে আসতে সক্ষম হন। এ সময় দুই বন্ধুকে উদ্ধারের জন্য দ্রুতগতির জলযান ‘জেডস্কি’র এক চালকের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তবে জেডস্কিচালক টাকা ছাড়া উদ্ধারে যেতে রাজি হননি। তিনি রাজি হলে মারুফকে জীবিত উদ্ধার করা যেত।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, সহযোগিতায় সাড়া না দিয়ে টাকা দাবি করা ওই জেডস্কিচালকের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। ঘটনার সত্যতা পেলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য রিপন চৌধুরী বলেন, শাওনের পেটের পানি বের করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।
উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেওয়া সি সেফ লাইফগার্ড ওসমান গনি প্রথম আলোকে বলেন, ভাটার সময় স্রোতের টান প্রবল হয়। ঢেউয়ের ধাক্কায় ছিটকে পড়া তিনজন স্রোতের টানে গভীর সাগরের দিকে ভেসে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাঁতার কেটে একজন উঠে আসতে সক্ষম হন। তাঁরা সাগর থেকে শাওনকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান।
বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত নিখোঁজ মারুফের সন্ধান মেলেনি জানিয়ে ওসমান গনি বলেন, টানা কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল রয়েছে। শৈবাল পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত চার কিলোমিটার সৈকতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। কলাতলী, সিগাল, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টের সাগরে কয়েকটি অংশে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। এসব খালে আটকা পড়লে জীবিত উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া গুপ্তখালে নেমে তল্লাশি চালানোর মতো প্রশিক্ষণও লাইফগার্ড কর্মীদের নেই।