সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র জেলার ১ ও ২ আসনে। এসব কেন্দ্র নিয়ে বাড়তি প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন–সংশ্লিষ্টদের।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরে পাঁচটি সংসদীয় আসনে ৯৩৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ৫৯৫টি ভোটকেন্দ্রকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব কেন্দ্রের বিষয়ে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি প্রস্তুতি।
ভোটাররা বলছেন, দেশের অন্যান্য জায়গায় নির্বাচনী আমেজ যেমনই হোক, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে গাজীপুরের অধিকাংশ আসনেই নির্বাচন জমবে। বিশেষ করে গাজীপুর–১, ২, ৩ ও ৫ আসনে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা গেছে। প্রচারণার শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী–সমর্থকেরা ব্যস্ত পার করেন। উত্তেজনা ছড়ায় তাঁদের বড় সভা–সমাবেশ ও শোভাযাত্রায়।
জেলার পাঁচটি নির্বাচনী আসনেই অর্ধেকের বেশি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও গাজীপুর–১ ও ২ আসনে সংখ্যাটা বেশি। গাজীপুর-১ আসনটি গঠিত কালিয়াকৈর-বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকা নিয়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী এই আসনের ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৮২টি, যা মোট কেন্দ্রের ৬৪ শতাংশ।
এই আসনের প্রধান দুই প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম (রাসেল)। আসনটির কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর, চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ ও মৌচাক এলাকাসহ কয়েকটি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) এ এফ এম নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, বিডিআরসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র গাজীপুর-২ (সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ড) আসনে। এই নির্বাচনী এলাকার টঙ্গী, আউচপাড়া, এরশাদনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় নানা কারণে উত্তপ্ত পরিস্থিতি থাকে। এ আসনের ৪০০ ভোটকেন্দ্রের ২৯৭টি অর্থাৎ ৭৪ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টঙ্গী এলাকায় যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ গ্রহণ করা হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত আছে।
এই আসনে আলোচনায় থাকা দুই প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান (রাসেল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন।
গত সোমবার রাতে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের আংশিক) আসনের মাওনার সলিংমোড় এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনের (সবুজ) নির্বাচনী ক্যাম্পের পাশে তাঁর এক কর্মীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গুলির ঘটনা ঘটে। গুলিতে ইলিকট্রনিক পণ্যের শোরুমের কাচ ছিদ্র হয়ে যায়। কাচের টুকরার আঘাতে ভেতরে থাকা দুজন আহত হন। এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী। প্রচারণার শুরু থেকেই দুই প্রার্থীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আঁচ পড়তে পারে ভোটকেন্দ্রগুলোতেও।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এই আসনের ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৯০টি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে বেশির ভাগ কেন্দ্র ভাওয়ালগড়, পিরুজালী ও মির্জাপুর ইউনিয়নে। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ছানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ আসনের সব কটি ভোটকেন্দ্রকে প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ নজরে রেখেছে।
এ ছাড়া, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের ১২২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৭২টি। এই আসনে প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের সিমিন হোসেন (রিমি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদ। গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ, সিটির তিনটি ওয়ার্ড ও বাড়িয়া ইউনিয়ন) আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০৫টি আসনের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৫৪টি। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেহের আফরোজ (চুমকি)। বাকিদের মধ্যে বেশি আলোচনায় গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান।
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম কাজী সফিকুল আলম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, কেন্দ্রগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দল কাজ করবে। থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
গাজীপুর শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ভোটারের বড় একটি অংশ শ্রমিক। প্রার্থীরাও মনে করছেন, শ্রমিক যেদিকে যাবে, সেই প্রার্থীরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রমিকনেতাদের দাবি, নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ও শহরে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক শ্রমিক পরবর্তী সংসদ সদস্যকে হবেন, তা নির্ধারণের চাবিকাঠি হয়ে উঠবে। তবে ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ আছে তাঁদের।
এ ছাড়া গাজীপুরে ভোটারদের বড় একটি অংশ নারী। এই নির্বাচনে গাজীপুরে কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা দেখা গেছে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে নারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শহরের ভোগড়া এলাকার শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘অনেকেই বলছেন ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা হতে পারে। এর জন্য চিন্তা করছি কেন্দ্রে ভোট দিতে যাব কি না।’
ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাজীপুরে ৫টি আসনের ৯৩৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। সব কটি কেন্দ্রকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে যা করা প্রয়োজন, আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছি।’