অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অবৈধ দখলদারদের খাল-নদী হত্যায় বান্দরবান জেলা শহর ফি বছর বন্যা ডেকে আনছে। গত আগস্টে নজিরবিহীন বন্যায় ডুবে গেছে গোটা পৌর শহর। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, শহরের অন্যতম প্রধান খাল ম্যাক্সি খাল, সাঙ্গু নদসহ ছোট-বড় নালা দখল হয়ে যাওয়ায় বন্যা এমন ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। ভবিষ্যতে শহরটিকে রক্ষা করতে হলে খাল, নালা ও নদীতীর থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংর সামনে জেলা শহরের বিশিষ্টজনেরা খাল ও নদী দখল নিয়ে এমন অভিযোগ করেছেন। অবিলম্বে নদী ও জলাশয় রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। গতকাল শনিবার দুপুরে পৌরভবন প্রাঙ্গণে বান্দরবান পৌরসভার উদ্যোগে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে মন্ত্রী নিজেও পৌর শহরের অগোছালো ও অপরিকল্পিত উন্নয়নে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, সবাই উন্নয়ন চায় কিন্তু খাল, নদী, নালার দখল কেউ ছাড়তে চায় না।
নাগরিক সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন সেনাবাহিনীর বান্দরবানের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ, বান্দরবান সেনা সদর জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহামুদুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ আলম। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পৌরসভার মেয়র শামসুল ইসলাম।
পৌরবাসী প্রবীণ শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সর্বস্তরের লোকজন সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অনেকে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং পৌরসভার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন।
ম্যাক্সি খাল নামের যে খালের নামে বান্দরবানের নামকরণ, সেই জলাশয়টিও দখলে হারিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক থানজামা লুসাই। তিনি বলেন, ম্যাক্সি খাল জেলা শহরের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত। খালটি দখলদারদের দখলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে জেলা শহরটি প্রতিবছর বর্ষার সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে। শঙ্খ নদের তীর দখল হওয়ায় একটু বের হয়ে স্বস্তিতে থাকার কোনো জায়গা নেই।
বান্দরবান পর্যটন নগর হলেও অপরিকল্পিত উন্নয়নকে প্রধান সমস্যা হিসেবে মনে করেন বান্দরবান প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, জেলায় উন্নয়ন হচ্ছে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই। এর ফলে উন্নয়নের সঙ্গে নানা ধরনের সংকটও বাড়ছে। অনেক প্রভাবশালী খাল দখলের পাশাপাশি নালাও দখল করেছেন। নালায় পয়োনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্গন্ধে হাঁটাচলা করা যায় না। এ অবস্থায় পর্যটকদের অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেছেন, পৌরসভার সবাই উন্নয়ন চায়। কিন্তু পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য খাল, নদী ও নালার অবৈধ দখল ছাড়তে বললে ভোটের সময় দেখে নেওয়ার হুমকি দেখান। জনপ্রতিনিধিরাও ভোটের ভয়ে কিছু বলতে পারেন না। এ জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন সবাই মিলে করতে হবে।
ম্যাক্সি বা মিয়কসে খালের নাম থেকে বান্দরবানের নাম হয়েছে। মারমা ভাষায় মিয়ক অর্থ বানর, আর ‘সে’ অর্থ বাঁধ। সেখান থেকে বান্দরবান হয়েছে। সেই ম্যাক্সি খালটি ক্রমেই দখলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং এর ফলে ৭০ হাজার জনসংখ্যার পৌর শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সামান্য বৃষ্টিতে দিনের পর দিন ডুবে থাকে। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বন্যায় জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকা চার দিন ডুবে ছিল।