স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে (রাখাইন রাজ্যে) দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যারা যুদ্ধ করছে (সশস্ত্র গোষ্ঠী) তাদের কয়েকজনের আনাগোনা এখানে (রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে) দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমার থেকে মাদক আসছে অনেক আগে থেকেই। এখানে মাদকের সঙ্গে অস্ত্র-গোলাবারুদও ধরা পড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে। যদিও বাংলাদেশে মাদকের উৎপাদন হয় না।
ক্যাম্পের কিছুসংখ্যক লোক (রোহিঙ্গা) মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাদের (মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী) চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে অস্ত্র ও খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছি। এটাই আমাদের প্রধান কাজ।’
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের তাজনিমারঘোনা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৯) যান। সেখানে এপিবিএন কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই আশ্রয়শিবিরে ৩৭ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, এপিবিএন প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর, ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. ইকবাল, ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক হাসান বারী প্রমুখ।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। আশ্রয়শিবিরগুলোর নিরাপত্তা দিচ্ছে এপিবিএনের পৃথক তিনটি ব্যাটালিয়নের ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি সদস্য।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগে থেকে করা আশঙ্কার ‘কিছু কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে’ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘এসব রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমরা আগে থেকেই বলে আসছিলাম এদের (রোহিঙ্গাদের) দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বদেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না গেলে এখানে (আশ্রয়শিবিরে) অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এখানে (আশ্রয়শিবিরে) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের হাব তৈরি হতে পারে। অস্ত্রের ঝনঝনানি হতে পারে। অনেক কিছুই হতে পারে। এখন তার কিছু কিছু আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি। রোহিঙ্গারা মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে, অবৈধ অস্ত্রে খুনখারাবিতে জড়িত হয়েছে। কয়েকটি গ্রুপ তৎপরতা চালাচ্ছে। যেকোনো মূল্য এসব সন্ত্রাসী তৎপরতা থামাতে হবে। আশ্রয়শিবিরে আর কোনো রক্তপাত-অশান্তি আমরা দেখতে চাই না।’
মিয়ানমারের কথা ও কাজে মিল নেই মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বাংলাদেশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। মিয়ানমার একটি অস্থিতিশীল দেশ। ওখানে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা চলে। বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা চুক্তি বা সমঝোতায় স্বাক্ষর হলেও তা মিয়ানমারের কারণে অগ্রগতি হচ্ছে না।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৯) এ-৭ ব্লকের পাহাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে সড়কপথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেকনাফ পৌঁছে বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কক্সবাজার ফিরে আসেন। সন্ধ্যায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।