সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ২০২০ সালে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
চার বছর আগে সাতক্ষীরার পাঁচ উপজেলায় জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খননের ওই প্রকল্পের জোয়ারাধার (টিআরএম) পদ্ধতি না রাখায় সুফল পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন নদী ও পানিবিশেষজ্ঞরা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর না হলে জেলার লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তি পোহাবেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পলি পড়ে বেতনা, মরিচ্চাপ, সাপমারা ও লাবণ্যবতী নদী ভরাট হয়ে গেছে। এতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ও পৌরসভা, আশাশুনি, দেবহাটা, তালা ও কলারোয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
একটু বৃষ্টিতে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ–ছয় মাস এসব উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্প সাতক্ষীরার পাউবো বিভাগ-১ ও ২ বাস্তবায়ন করছে।
‘বৃষ্টি হলেই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বছরের প্রায় ছয় মাস তাঁদের বাড়ির আঙিনাসহ রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকে। রোদে না শুকালে পানি সরে না।’মোকছেদ হোসেন, মাছখোলা গ্রামের বাসিন্দা
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (বর্ধিতাংশ) নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়ন’ নামের চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বেতনা-মরিচ্চাপ নদী থেকে পলি অপসারণের মাধ্যমে এ অববাহিকায় জলাবদ্ধতা নিরসন ও জনদুর্ভোগ প্রশমন হবে। এ জন্য বেতনা নদীর ৪৪ কিলোমিটার ও মরিচ্চাপ নদীর ৩৮ কিলোমিটার খনন ছাড়াও ৩৪৪ কিলোমিটার সংযোগ খাল খনন, ৬টি স্লুইসগেট নির্মাণ, ২১টি স্লুইসগেট সংস্কার ও ১১৩ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার করা হবে। চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের ১ জুলাই শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা।
বেতনা নদীর পাশের মাছখোলা গ্রামের বাসিন্দা মোকছেদ হোসেন জানান, ‘বৃষ্টি হলেই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বছরের প্রায় ছয় মাস তাঁদের বাড়ির আঙিনাসহ রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকে। রোদে না শুকালে পানি সরে না।’
বেতনা নদীর আশাশুনি উপজেলার বাহদুরপুর গ্রামের আবদুল হাকিম বলেন, নদী কেটে খাল করা হচ্ছে। আগে নদী ছিল ৮০-৯০ ফুট। এখান তা ৪০-৫০ ফুট করা হচ্ছে। এরপর কাজ করা হচ্ছে ধীরগতিতে।
মরিচ্চাপ নদীর শোভনালী গ্রামের হরিদাস জানান, স্বাধীনতার পরও মরিচ্চাপ নদী শোভনালি অংশের প্রস্থ ছিল ১০০ ফুটের বেশি। কিন্তু নদীর প্রস্থ ৪৫-৫০ ফুটের মতো।
বেতনা রিভার বেসিন পানি কমিটির সভাপতি মো. মফিজুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ট্রাস্টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে জরিপ করে সাতক্ষীরা জেলার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে খাল ও নদী খননের পাশাপাশি বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর অববাহিকার বিলে জোয়ারাধার (টিআরএম–টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প থেকে জোয়ারাধার পদ্ধতি বাদ দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে মানুষ সুফল পাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি এ বি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, আইডব্লিউএমের সুপারিশ সত্ত্বেও বেতনা-মরিচ্চাপ নদীর অববাহিকায় জোয়ারাধার পদ্ধতি বাস্তবায়নের প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে। বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী দুটি জোয়ার-ভাটার নদী। সে কারণে জোয়ার-ভাটার নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য জোয়ারাধার গুরুত্বপূর্ণ। জোয়ারাধার পদ্ধতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি সীমান্ত নদী ইছামতীর সঙ্গে সাপমারা ও লাবণ্যবতী নদীর সংযোগ স্থাপন না করলে এ প্রকল্প সুফল বয়ে আনবে না।
পাউবোর সাতক্ষীরা বিভাগ-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন ও বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান জানান, তাঁরা সাতক্ষীরা মাত্র কয়েক মাস আগে এসেছেন।
জোয়ারাধার পদ্ধতি প্রকল্প থেকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে, তা তাঁরা বলতে পারবেন না। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ করছেন দাবি করে তাঁরা বলেন, নানা সমস্যার কারণে কাজ কিছুটা ধীরগতিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।