বৃষ্টিতে ভিজে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের ঈদের নামাজ আদায়

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। আজ সকালে
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। রেওয়াজ অনুযায়ী, বন্দুকের ফাঁকা গুলির শব্দের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় জামাত শুরু হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিদের এই জামাতে ইমামতি করেন জেলা শহরের মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান।

ভোর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যে দলে দলে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন মাঠে। বৃষ্টিতে কেউ ছাতা, কেউ পলিথিন, কেউ জায়নামাজ মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। বৈরী আবহাওয়া ও তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও মাঠ ছেড়ে যাননি মুসল্লিরা। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশপথে তাঁদের প্রত্যেকের দেহ তল্লাশি করা হয়।

পশু কোরবানির কার্যক্রম থাকায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের তুলনায় পবিত্র ঈদুল আজহার জামাতে মুসল্লির সংখ্যা সাধারণত কম থাকে। তবে অনেকে দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠে নামাজ আদায় করে আসছেন। তেমনই একজন আবদুর রহিম। তিনি বলেন, তিনি দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে এই মাঠে নামাজ আদায় করে আসছেন। শুধু মাঝে করোনাকালে দুই বছর নামাজ আদায় করতে পারেননি। এবার ভারী বৃষ্টিতেও তিনি নামাজ আদায় করে শুকরিয়া আদায় করেন।

টাঙ্গাইল থেকে ঐতিহাসিক এই মাঠে নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন তিন বন্ধু নাজমুল ইসলাম, রিফাত ইসলাম ও মো. সিয়াম। নাজমুল বলেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল ঐতিহ্যবাহী এই মাঠে নামাজ আদায় করব। এবার মনের আশা পূরণ হয়েছে।’

অনেকে পলিথিন মাটিতে বিছিয়ে, কেউ আবার কাদাপানিতে সেজদা দিয়ে নামাজ আদায় করেন। দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে নামাজ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে মোনাজাত করে যাঁর যাঁর বাড়িতে ফেরেন মুসল্লিরা।

বৃষ্টিতে কেউ ছাতা, কেউ পলিথিন, কেউ জায়নামাজ মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আজ সকালে শোলাকিয়া মাঠে

২০১৬ সালের ৭ জুলাইয়ের জঙ্গি হামলার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সকাল থেকেই ঈদগাহ ময়দানে বিজিবি, র‍্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), সাদাপোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা তৎপর ছিলেন। ওয়াচ টাওয়ারসহ পুরো ঈদগাহ ময়দান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল। ছিল ফায়ার ব্রিগেড, অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এখানে নামাজ আদায় শেষে বলেন, দূরদূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেক ধৈর্য ধরে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন।

নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করে মুসল্লিরা ঘরে ফেরায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরের দিন অপ্রত্যাশিত হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও মাঠে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টিতে মুসল্লির সংখ্যা কম হলেও নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না।

শোলাকিয়ায় এবার অনুষ্ঠিত হলো ঈদুল আজহার ১৯৬তম জামাত। বিভিন্ন বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়ায় প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈশা খাঁর বংশধর দেওয়ান হয়বত খাঁ কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর এই ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে মাঠের জমির পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়।

কিশোরগঞ্জের ইতিহাস নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইয়ে শোলাকিয়া মাঠ নিয়ে দুটি জনশ্রুতির বর্ণনা রয়েছে। এর একটি হলো, মুঘল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ লাখ টাকা। মানে এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে শ লাখ থেকে বর্তমান শোলাকিয়া হয়েছে। আরেকটি বর্ণনায় আছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এটি শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।