বান্দরবান জেলা শহরতলির লাইমিপাড়ায় আজ শুক্রবার ভোরে র্যাব অভিযান চালিয়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এক নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর নাম আকিম বম। র্যাব জানায়, রোয়াংছড়ির গহিন বনে কেএনএফের নারী প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে।
গ্রেপ্তার ১৮ বছরের তরুণী আকিম বম সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সক্রিয় সশস্ত্র সদস্য বলে র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।
আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় বান্দরবান জেলা পরিষদের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫–এর অধিনায়ক বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কে জেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে লাইমিপাড়ায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে একটি বাড়িতে আকিম বমকে পাওয়া যায়। তাঁর বাবার নাম সিয়াম থং বম। কেএনএফের এই সক্রিয় নারী সদস্য কোথাও সেবা লাল নুং, কোথাও আরামপি বম নামে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এর আগে কেএনএফের বান্দরবান অঞ্চলের সমন্বয়ক ও প্রধান রসদ সরবরাহকারী চেওসিম বম, ফারুকপাড়ার কেএনএফ সভাপতি সানজু বমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গ্রেপ্তার আকিম বম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে কাল্লা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে পড়ার সময় মাইকেল নামের এক তরুণের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। পরে তাঁরা সম্পর্কে জড়ান। মাইকেলের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেএনএফের প্রশিক্ষণে আগ্রহী হন তিনি। মাইকেল তাঁকে রোয়াংছড়ির গহিন জঙ্গলে প্রশিক্ষণঘাঁটিতে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছার পর ভানথার ময় বম নামের এক নারী কমান্ডার তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। কেডিওন (ঈশ্বরের দিকে) নামে প্রশিক্ষণকেন্দ্রে তাঁদের ব্যাচে ২০ প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন।
প্রশিক্ষণে চার থেকে পাঁচজন প্রশিক্ষক ও প্রশাসনিক কাজে আলাদা সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলা প্রশিক্ষণে মার্শাল আর্ট, সহ্য ক্ষমতার জন্য লাঠির আঘাত, পাহাড়ি জঙ্গলে টিকে থাকার নানা কলাকৌশল শেখানো হয়েছে। প্রশিক্ষণের সময় ছিল ভাত, কলার ফুল সাধারণ খাবার। মাঝেমধ্যে বনের পাখি ও কাঠবিড়ালির মাংস খাওয়ানো হতো। আকিম বম আরও জানিয়েছেন, ৫০ জন তরুণী প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। নারীদের পাশাপাশি ওই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে তিন শতাধিক পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
বান্দরবানের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সালে তৎপরতা শুরুর পর থেকে নারী শাখায় সক্রিয় সদস্যের কথা শোনা যায়। তাদের ফেসবুক পেজেও নারী সদস্যের ভিডিও চিত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই পরস্পর সহযোগী কেএনএফ ও জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পর সশস্ত্র নারী সদস্যদের দেখা যায়নি। আগে গ্রেপ্তার ২৪ জন নারীর কেউ কেএনএফের সরাসরি সদস্য বলে অভিযোগ আনা হয়নি। এবারে প্রথম র্যাব নারী শাখার সদস্যকে গ্রেপ্তার করল।
২ এপ্রিল রুমায় ও ৩ এপ্রিল থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র লুট করে। ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে এই পর্যন্ত চারজন কেএনএফ সদস্য নিহত ও ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুটের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২৫ নারীসহ ৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।