১৯৯০ সালের কথা। জহের উদ্দিনের বাড়ির পাশে পুকুর খনন করতে গিয়ে শ্রমিকেরা লোহার তৈরি একটি বস্তুর সন্ধান পান। বস্তুটি দেখতে কিছুটা গোলাকৃতির হওয়ায় খেলনা মনে করে জহের উদ্দিন সেটি বাড়িতে রাখেন। দীর্ঘ ৩৩ বছরেও ওই বস্তুর কেউ খোঁজ নেয়নি। কয়েক দিন আগে জহের উদ্দিনের এক আত্মীয় ওই বস্তু যে গ্রেনেড, তা বুঝতে পারেন। এরপর তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ তাঁদের বাড়িতে গিয়ে গত রোববার গ্রেনেডটি উদ্ধার করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জহের উদ্দিনের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর এলাকায়। তিনি দেড় বছর আগে মারা গেছেন। তাঁর দুই ছেলে আছেন। বড় ছেলে জয়নাল আবেদিন ও ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে রাজারচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জহের উদ্দিনের দুই ছেলে পাশাপাশি দুটি ঘরে থাকেন। তাঁর বড় ছেলে জয়নাল আবেদিনের ঘরের শোকেস থেকে গ্রেনেডটি উদ্ধার করা হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৯০ সালের কথা। তখন পুকুর কাটতে গিয়া এই বলটি আব্বায় পায়। এটারে যে গ্রেনেড বোমা কয়, তা আমি কোনো দিনই জানতাম না। এত বছর ধইরা এটারে খেলনা কইরা আমি খেলছি, আমার পোলা-মাইয়া খেলছে, ছোট ভাইয়ের বাচ্চারা খেলেছে, আমার ভাগনে-ভাগনিরা খেলেছে, বাড়ির আশপাশের বাচ্চারাও খেলছে। কেউ তো এত দিন কিছু কয় নাই। ঘরের বাইরেও মেলা দিন এইডা (গ্রেনেড) পইড়া ছিল।’
জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী ঝুমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন ভয় লাগে নাই। এখন ভাবতে গেলে ভয় লাগে। এতগুলা বছর গ্রেনেডটারে খেলনা মনে কইরা বাচ্চারা খেলাধুলা করছে। এইডা যে গ্রেনেড হইবে, তা আমরা কখনো চিন্তাও করি নাই।’
স্থানীয় লোকজন সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয়নালের বাবা জহের উদ্দিন সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের দফাদার ছিলেন। পুকুর খননের সময় গ্রেনেডটি পাওয়ার পর তিনি সেটি বাড়িতে এনে রেখে দেন। এরপর গ্রেনেডটি জয়নালের ঘরের আঙিনায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি জয়নালের ছেলে জোবায়ের মুনশি (১৫) তার মামা বাবু মোল্লার বাড়িতে বেড়াতে যায়। ওই বাড়িতে বসে টেলিভিশনে একটি সিনেমা দেখার সময় সে গ্রেনেড দেখতে পায়। এ সময় জোবায়ের তার মামাকে জানায়, তাদের বাড়িতেও এ ধরনের একটি গ্রেনেড রয়েছে। বাবু মোল্লা বিষয়টি প্রথমে গুরুত্ব দেননি। পরে ভাগনের পীড়াপীড়িতে গত রোববার বাবু তাঁর বোনের বাড়িতে যান এবং সেখানে ঘরের আঙিনায় গ্রেনেডটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে গ্রেনেডটি তিনি ঘরের শোকেসের মধ্যে নিয়ে রাখেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি শিবচর থানার পুলিশকে জানান। পরে রোববার রাতে পুলিশ গিয়ে গ্রেনেডটি উদ্ধার করে।
শিবচর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিবচর থানার পুলিশ জয়নাল আবেদিনের ঘরের আলমারি থেকে গ্রেনেডটি উদ্ধার করে। পরে গ্রেনেডটি থানার হেফাজতে রাখা হয়। গ্রেনেডটি দুই ইঞ্চি লম্বা। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত থাকায় গ্রেনেডটির বিভিন্ন অংশে মরিচা পড়েছে।
গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনায় কোনো মামলা করেনি পুলিশ। তবে গতকাল সোমবার আদালতের আদেশ নিয়ে গ্রেনেডটি ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত চলছে। তবে এ ঘটনায় এখনো আমরা মামলা করিনি। এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’
গ্রেনেডটি উদ্ধার করার সময় উপস্থিত ছিলেন শিবচর থানার উপপরিদর্শক মিলন কুমার হালদার। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করতে আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি আমরা। ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাদের বিশেষজ্ঞ দল দু-এক দিনের মধ্যে এসে গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করবেন।’