খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্য করে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় আটজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রত্যেককে চিঠি দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। তবে চিঠি পাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় নন।
নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন—৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ সাজ্জাদ হোসেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব কায়সার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী ফজলুল কবীর, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি শমসের আলী, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও সাবেক কাউন্সিলর আমান উল্লাহ আমান, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা এ কে এম মোসফেকুস সালেহীন ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সাবেক সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মাজেদা খাতুন।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, চিঠি পাওয়া নেতাদের মধ্যে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শমসের আলীর প্রার্থিতা এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে। আপিল করেও তিনি প্রার্থিতা ফেরত পাননি। শমসের আলী বছর দেড়েক আগেই দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থী মাজেদা খাতুন ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মাহবুব কায়সারও ওই একই সময়ে দল থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁরা বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ওরফে মঞ্জুর অনুসারী। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নজরুল ইসলামকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতির প্রতিবাদে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার ১৬টি ওয়ার্ড ও অঙ্গসংগঠনের ৫৭৭ নেতা পদ ছাড়েন। নজরুলপন্থী ওই তিনজন তখন পদত্যাগ করেছিলেন। পরে তাঁরা দলে যোগ দেননি। বিএনপির নতুন কমিটি সদস্য সংগ্রহ করলেও তাঁদের সদস্য পদও দেওয়া হয়নি।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগর লবীর অনুসারী ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আমান উল্লাহও গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। দলে তাঁর কোনো পদ–পদবি নেই। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপি তাঁকে সমর্থন দিয়েছিল। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী ফজলুল কবীরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী এ কে এম মোসফেকুস সালেহীন একসময় বিএল কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতি করলেও ২৩ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়।
কেন্দ্র থেকে চিঠি দেওয়া চারজন নেতা জানিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে শোকজ করা হবে, এটা তাঁরা জানতেন। তবে কারণ দর্শানোর চিঠি এখনো তাঁরা হাতে পাননি।
খুলনা বিএনপির সূত্র জানায়, গত ২৯ এপ্রিল খুলনা মহানগর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় কেসিসি নির্বাচনে দলের কোনো নেতা-কর্মী অংশ নিতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনকি কোনো প্রার্থীর পক্ষে তাঁরা প্রচারণাও চালাতে পারবেন না। নির্বাচনে কারও অংশ নেওয়ার প্রমাণ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ওই আট নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠির একটি অনুলিপি তাঁকে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটি নেবে।