স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্টাবলিশমেন্ট অফ নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ভবনটি নিয়ে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
ভবনটির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয় ২০১৬ সালের ১১ মার্চ। নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। প্রথম বরাদ্দ ছিল ১৩ কোটি টাকা। এরপর দুই দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। বরাদ্দ বেড়ে হয় ১৮ কোটি টাকা। ধুঁকে ধুঁকে ২০১৯ সালের ৩০ জুনে শেষ হয় নির্মাণকাজ। তৈরি হয় প্রশাসনিক জটিলতা। ফলে সাড়ে ৩ বছর ধরে পড়ে আছে ভবনটি। ফেরত যাচ্ছে ভবনের আসবাব কেনার ৫৯ লাখ টাকা।
পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্টাবলিশমেন্ট অফ নার্সিং ইনিস্টিটিউট প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ভবনটি নিয়ে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউটটির যাত্রা।
ডায়াবেটিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রকল্পটির আওতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডায়াবেটিক সমিতি যৌথভাবে নার্সিং ইনস্টিটিউটটি তৈরির উদ্যোগ নেয়। ভবনটি নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় গণপূর্ত বিভাগকে। প্রকল্পটির পরিচালক নিযুক্ত করা হয় জেলা সিভিল সার্জনকে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব দপ্তরকে বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না।ফয়সাল রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ জেলা কার্যালয়
প্রথম দফায় প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৩ কোটি টাকা। বরাদ্দ অনুযায়ী জেলা সদরের গাছপাড়া এলাকায় ২০১৬ সালের ১১ মার্চ ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালের পাশে সমিতির জমিতে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পরপর দুই বছর আরও দুই দফা নির্মাণকাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এতে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ কোটি টাকা। অধিক ব্যয়ে ২০১৯ সালের ৩০ জুন ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
ডায়াবেটিক সমিতির দাবি, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় তারা ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে জানায়। কিন্তু তখন পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে গণপূর্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘বালিশ কেলেঙ্কারির’ অভিযোগ ওঠে। এতে গণপূর্তর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ প্রকৌশলী বদলি হন। একই সঙ্গে নাসিং ইনস্টিটিউট প্রকল্পের পরিচালক ও সিভিল সার্জনও বদলি হন। এতে ঝুলে যায় ভবনটির হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
গত সোমবার সকালে দেখা যায়, পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের পাশেই ডায়াবেটিক সমিতির হাসপাতাল। হাসপাতালটি পুরোদমে চালু। এর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে দ্বিতল নার্সিং ইনস্টিটিউট ভবন। ভবনের দেয়ালে ঝুলছে কয়েকটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। তবে চালুর আগেই সেগুলোতে জং পড়ে গেছে। অন্যদিকে ভবনটি রাখা হয়েছে তালাবন্ধ করে। ভেতরে জং পড়ে নষ্ট হচ্ছে দরজা-জানালা।
ডায়াবেটিক সমিতির সমন্বয়কারী নূরুল আলম জানান, নার্সিং ইনস্টিটিউটটি চালু হলে এখান থেকে প্রতিবছর আবাসিক সুবিধাসহ ৫০ জন প্রশিক্ষিত নার্স পাওয়া যেত। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় প্রকল্পটি ঝুলে আছে। ভবনটি দিনে দিনে পরিত্যক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়ে ভবনটির নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যাচ্ছে না।
পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম বলেন, ভবনটি বুঝে পেতে গণপূর্ত বিভাগসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গত সাড়ে তিন বছরে অন্তত তিন শ বার যোগাযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির জন্য নতুন কোন পিডি নিয়োগ দেয়নি। ভবনটির বিষয়ে তারা এখন কিছু বলছেও না। উল্টো ভবনের আসবাপত্র কেনার জন্য যে ৪৯ লাখ টাকা ছিল, সেটাও ফেরত চেয়েছে। এতে নার্সিং ইনস্টিটিটটি চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে পাবনার সিভিল সার্জন চিকিৎসক মনিসর চৌধুরী বলেন, সরকারের টাকা ব্যবহার না হলে ফেরত যাবে, এটাই স্বাভাবিক। মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যেই টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
গণপূর্ত বিভাগ জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাতেও বহুবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না। এখন ভবনটি এভাবে পড়ে থাকলে পরিত্যক্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক।’