ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতার যাবজ্জীবন

ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম (বাঁয়ে) ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের নলডাঙ্গায় ছাত্রলীগের এক নেতাকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আওয়ামী লীগ এক নেতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলায় আসাদুজ্জামানের দুই ভাই ফয়সাল শাহ ও আলীম আল রাজীও আসামি ছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাঁদের বেকসুর খালাস দেন।

নিহত ছাত্রলীগ নেতার নাম জামিউল আলীম জীবন (২২)। তাঁর বাবার নাম ফরহাদ শাহ। বাড়ি নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজীপুর গ্রামে। জামিউল উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। দণ্ড পাওয়া আসাদুজ্জামান নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এ ঘটনার পর তিনি চেয়ারম্যান ও দলীয় পদ দুটিই হারান।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক জানান, গত ৩০ জুন মামলাটি নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এরপর আদালতে ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত আজ রায় দিলেন। রায়ে যিনি দণ্ডিত হয়েছেন, তিনি পলাতক আছেন। অন্য দুজন কারাবন্দী। রায় ঘোষণার জন্য তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। খালাস পাওয়ায় কারাগার থেকে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হবে। পলাতক আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন। গ্রেপ্তারের পর তাঁর সাজা কার্যকর হবে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নলডাঙ্গা উপজেলার আমতলী বাজারের চার রাস্তার মোড়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক জামিউল আলীম ও তাঁর বাবা ফরহাদ শাহকে পিটিয়ে আহত করা হয়। চার দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামিউল মারা যান। এর আগে স্বামী ও ছেলেকে মারধরের ঘটনায় ২০ সেপ্টেম্বর জামিউলের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এতে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও তাঁর দুই ভাইকে আসামি করা হয়। জামিউল পরে মারা গেলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, এলাকার একটি মসজিদের মাইক চুরি নিয়ে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে সালিস বৈঠক হয়। জামিউল আলীমকে চুরির ঘটনায় জড়িত করে সন্দেহভাজনদের তালিকা করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ওই রাতেই জামিউল ফেসবুক লাইভে সালিস ষড়যন্ত্রমূলক ও আক্রোশবশত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের সমালোচনাও করেন লাইভে। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান তাঁর সহযোগীদের নিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তাঁর বাবা ফরহাদ শাহকেও পেটানো হয়।

মামলা তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আসাদুজ্জামান ও তাঁর দুই ভাইকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন নলডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার চৌধুরী। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় আসাদুজ্জামানকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। আওয়ামী লীগের দলীয় পদও হারান তিনি।

নিহত জামিউলের মা ও মামলার বাদী জাহানারা বেগম বলেছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘প্রকাশ্যে জামিউলকে পেটানো হয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, রায়ে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে। আদালতের রায়ে আমরা খুশি হতে পারিনি।’