বিশালাকৃতির ঘেরের পাড়ে বাঁশ ও নেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। আর তাতে ঝুলছে সারি সারি তরমুজ। একেকটি তরমুজের ওজন তিন থেকে চার কেজি। ওজনের ভারে পানিতে নুয়ে পড়ায় জালের ব্যাগ দিয়ে বাঁধা হচ্ছে মাচার সঙ্গে। কোনো তরমুজের রং কালো, কোনোটার হলুদ, আবার কোনোটার রং সবুজ। সেখানে রয়েছে হলুদ রঙের মাস্কমেলনও। ফলের এ মাচা দেখে মন জুড়িয়ে যায় সবার।
নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রদীপ বর্মণ (৪৫) এ ঘের ও ফলের বাগান করেছেন। প্রদীপ বলেন, জনপ্রতিনিধি হলেও তাঁর মূল পেশা চাষাবাদ। প্রায় ২০ বছর ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত তিনি। পৌরসভার গোবিন্দনগরে ভক্তডাঙ্গার বিলে প্রায় ৯৫ একর জমিতে একটি মাছের ঘের রয়েছে তাঁর। মাছের পাশাপাশি সারা বছর ঘেরের পাড়ে শাকসবজি আর ফলমূলের আবাদ করেন তিনি। এ বছর ঘেরের পাড়ে রংবেরঙের তরমুজ ও মাস্কমেলন চাষ করেছেন। এখন তরমুজের মৌসুম নয়। তাই বাজারে চাহিদা থাকায় ভালো লাভবান হবেন বলে আশা প্রদীপের।
প্রদীপ বর্মণ বলেন, তিন বছর ধরে ঘেরের পাড়ে তরমুজের চাষ করছেন। এ বছর তৃপ্তি ও বাংলালিংক জাতের তরমুজ এবং মাস্কমেলন চাষ করেছেন। ৯৫ একর ঘেরে তিনি ১০ হাজার চারা রোপণ করেছিলেন। এর মধ্যে সাত হাজার তরমুজের চারা এবং তিন হাজার মাস্কমেলনের। ফলন ভালো হয়েছে, প্রতিটি গাছেই একাধিক ফল ধরেছে। বাংলালিংক জাতের তরমুজগুলোর একেকটি প্রায় পাঁচ থেকে সাত কেজি এবং তৃপ্তি জাতের তরমুজের ওজন দুই থেকে তিন কেজি। চারা থেকে ফল পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত দুই মাসে তাঁর খরচ হয়েছে আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। আর কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি শুরু হয়ে যাবে। ফল বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা আয় করবেন আশা করছেন তিনি।
চাষাবাদ করে যে শুধু নিজেই লাভবান হচ্ছেন প্রদীপ, তা নয়। এলাকার বেশ কয়েকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছেন তিনি। নিয়মিত তাঁর খেতে কাজ করেন ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক। বিভিন্ন মৌসুমে শ্রমিকের সংখ্যা দ্বিগুণও হয়। এখানে কাজ করে যা বেতন পান, তা দিয়েই চলে তাঁদের সংসার।
শ্রমিকদের মধ্যে একজনের নাম সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ঘেরের পাড়ে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফলমূলের আবাদ করা হয়। এখন অমৌসুমের তরমুজ ও মাস্কমেলন চাষ করা হচ্ছে৷ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এখানে চাষাবাদ করা হয়। আমাদের আশপাশে এত তরমুজ আর কোথাও চাষ করা হয়নি।’
আরেক শ্রমিক অন্তর বিশ্বাস বলেন, ঘেরে তাঁরা সব সময় ১০ থেকে ১২ জন কাজ করি। তিনি এখানে তিন বছর কাজ করছেন।
কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে নানা জাতের তরমুজ চাষ হলেও প্রদীপ বর্মণের এখানে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। ফলনও ভালো হয়েছে। এখানে ঘেরে মাছ চাষের পাশাপাশি বাড়তি ফসল হিসেবে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। একই জমি থেকে মাছও পাচ্ছেন, আবার তরমুজ চাষ করে বাড়তি টাকাও আয় করছেন। এটি জমির সর্বোচ্চ ও সঠিক ব্যবহারের একটি ভালো দৃষ্টান্ত।
ওই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, তরমুজ এ মৌসুমের ফল নয়। এ সময় ফলের দাম ভালো পাওয়া যাবে, কৃষক লাভবান হন। তাই কৃষকের সঙ্গে থেকে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁরা এসব ফলের উৎপাদন বাড়াতে চেষ্টা করছি। তাঁরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে আরও বেশি কৃষক এই ফসল চাষে আগ্রহী হবে।